প্রভাবশালীদের সহায়তায় রাজধানীতে চলছে নিষিদ্ধ ইজিবাইক

ঢাকা, জাতীয়

তাসকিন আল আনাস,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-12-21 18:33:22

নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অনেকটা নিরুপায় হয়েই যাত্রী উঠছে এই ঝুঁকিপূর্ণ ইজিবাইকে। ৪ জনের বাহনে জোর করে বসানো হচ্ছে ৮ জন। চাপাচাপি আর গাদাগাদি করে বসায় দেহের অনেক অংশই থাকছে ইজিবাইকের বাইরে, তবুও যেন দেখার কেউ নেই।

রোববার (৩ মার্চ) নিউমার্কেট, বেড়িবাঁধ ও তার আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় অবাধে চলছে এই অবৈধ যানবাহন। ১ আগস্ট ২০১৫ সাল থেকে সড়ক নিরাপত্তা বিধানে এসব থ্রি-হুইলার অটোরিকশা মূল সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তা পরিণত হয়েছে এলাকাভিত্তিক পরিবহনে, গড়ে উঠেছে অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ড।

এসব ইজিবাইকের ভাড়া ঠিক করে দেয়ারও যেন কেউ নেই। বিজিবি ১ নং গেট, মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত এক কিলোমিটারেরও কম স্থানে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা করে। এছাড়া কামরাংগীচর থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে হাজারী বাগ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকা হয়ে বসিলা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এভাবে ৮ জন করে যাত্রী নিলে প্রতি ট্রিপে একজন ইজিবাইক চালক পেয়ে থাকেন ১৬০ টাকা। দিনে সর্বনিম্ন ১০ টি ট্রিপ সম্পন্ন করলে চালকের আয় থাকে ১৬০০ টাকা যা মাসিক ৪৮ হাজার টাকা বছরে ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা একটি গাড়িতে। শুধুমাত্র সেকশন এলাকায় একটি গ্যারেজে এমন অবৈধ ইজিবাইক আছে ১০০ টি। এছাড়াও আজিমপুর, কামরাংগীচর, বসিলা এলাকায় চলছে ২০০-৪০০ টি ইজিবাইক। সে হিসাবে মোট আয় হয় ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

গাড়ি চালিয়ে চালকের তেমন লাভ হয়না উল্লেখ করে বেশ কয়েকজন ইজিবাইক চালক বার্তা২৪.কমকে কে জানান, গাড়ি প্রতি জমা দিতে হয় ৫০০ টাকা এছাড়াও প্রভাবশালী নেতাদের দিতে হয় আরও ৬০০ টাকা এছাড়াও গাড়ির চার্জ এর জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ১৮০ টাকা। ফলে যা আয় হয় তার প্রায় পুরোটাই চলে যায় গ্যারেজ মালিক ও প্রভাবশালী নেতাদের হাতে।'

এসব বন্ধে নিজেদের চেষ্টার ত্রুটি নেই উল্লেখ করে কামরাংগীচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন ফকির (ওসি) বার্তা২৪ ডটকমকে বলেন, এসব বন্ধে বেশ কয়েকবার আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়াও আমরা নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েকবার ডাম্পিং করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আপনারা জেনে থাকবেন আমাদের থানাটাই ভাড়ায় জায়গায় তৈরি আর এখানে কোন ডাম্পিং ষ্টেশন না থাকায় এসব যানবাহন আমরা বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারিনা।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এগুলো কোনটাই অনুমোদিত না। এ বিষয়ে আমাদের প্রায়শই অভিযান চলে।’

সম্প্রতি এই ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন চকবাজারের ক্যামিকেল গুদাম আর খাদ্যে ভেজাল নিয়ে ব্যস্ত।'

তবে ভিন্নমত পোষণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিকুর রহমান। তিনি জানান, এসব কখনো বন্ধ করে লাভ হবেনা। এই ধরনের বাহনের উদ্ভব হয় প্রয়োজনের তাগিদে। যেখানে ফর্মাল ট্রান্সপোর্ট সহজলভ্য না সেখানে এসকল ইনফর্মাল ট্রান্সপোর্টের আবির্ভাব ঘটে। তাই এগুলো বন্ধ না করে বরং কিভাবে এদেরকে নিয়মের আওতায় নিয়ে আনা যায় তার চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাহনগুলোকে নিরাপদ করে গড়ে তোলা, এদের থেকে আহরিত অর্থ সরাসরি রাজস্ব খাতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা এবং এদের রুট ঠিক করে দেয়া।

এ সম্পর্কিত আরও খবর