গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাগলের প্রলাপ: ক্যাব

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:44:52

বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বাড়াতে চায়। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা কেউ অবান্তর, কেউ হাস্যকর, আর কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) একে পাগলের প্রলাপ অভিহিত করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) শুরু হয়েছে গণশুনানি। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দ্বিতীয় দিনে তিতাস গ্যাস ও সুন্দরবন গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে ভোক্তারা এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘যে এলএনজি পাইপ লাইনে আসেইনি, ২০১৯ সালের এপ্রিলে আসবে; তার ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব, আমি বলবো না। বিইআরসির মাথাও ঠিক নেই, না হলে এমন প্রস্তাব শুনানি করে!’

তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব আনা যায় না। পারবেন না। এটা বেআইনি, এই প্রহসন করবেন না।’

বিইআরসির উদ্দেশ্যে শামসুল আলাম বলেন, ‘সরকারকে বলছি, বেআইনি কাজ করবেন না। দাম বাড়াতে চান, বাড়ান। কিন্তু একটি আইনি কাঠামোর মধ্যদিয়ে বাড়ান।’

ক্যাবের উপদেষ্টার কথার রেশ ধরে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় না। কেন তিতাসকে ২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ট দিতে হবে? গ্যাস থাকে না দিনের বেশিরভাগ সময়। বাতাস বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ মাসে ২৩ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।’

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মাত্র গ্যাস সংযোগ শুরু হয়েছে। এখন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব হাস্যকর। গণশুনানিও হাস্যকর মনে হচ্ছে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে জ্বালানি দাম বেড়ে গেলে সংকটে পড়েন ব্যবসায়ীরা। একটা ফোরকাস্ট থাকা উচিত। তাহলে ব্যবসায়ীরা সেভাবে বিবেচনা করেই বিনিয়োগ করবে।’

‘সব সময় দাম বাড়ানোর আলোচনার জন্য ডাকা হয়, কখনও দাম কমানোর আলোচনা করতে দেখি না।’

বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানি বিভাগকে বলবো ইভিসি মিটারের বিষয়টি দেখার জন্য। কেন এটা দ্রুততার সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে না। এটা দ্রুত বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এক সময় বলা হতো দেশ গ্যাসে ভাসছে। আমাদের দেশের পত্রিকার চেয়ে নিউইয়র্কের পত্রিকায় বেশি ফলাও করে ছাপা হতো। উদ্দেশ্য কী ছিলো? রফতানি করা। আবার এখন ফলাও করে বলা হচ্ছে গ্যাস সংকট, এখনও ঐ একই ধরণের উদ্দেশ্য, আমদানি করতে হবে।’

তিতাস ও সুন্দরবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলএনজি এলে গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। কোম্পানিগুলো তারল্য সংকট ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বর্ধিত মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন।

তিতাস গ্যাসে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ১০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯ দশমিক ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আবাসিকে একচুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার দুই দশমিক ৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট দশমিক ৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, শিল্পে সাত দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক শূন্য চার টাকার পরিবর্তে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

যা গড়ে ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। কোম্পানিটি প্রথমে গড়ে ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও সংশোধিত প্রস্তাবে বাড়তি দর অনুমোদনের প্রস্তাব করেছে। প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিও। বরিশাল, খুলনা বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের আংশিক এলাকায় বিতরণের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে এক টাকা ২৫ পয়সা করার আবেদন করেছে।

অন্যদিকে তিতাস গ্যাস বিতরণ চার্জ বাড়ানোর জন্যও প্রস্তাবনা দিয়েছে তিতাস গ্যাস। কোম্পানিটি বর্তমান বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরে ৫৩ পয়সা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

তৃতীয় দিনে জালালাবাদ ও বাখরাবাদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করা হবে। শেষ দিন বৃহস্পতিবার হবে পশ্চিমাঞ্চল  ও কর্ণফুলি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রস্তাবের উপর গণশুনানি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর