'কর্তৃপক্ষ ভয়ে থাকে, ব্যারিস্টার কখন এসে লাইভ দেন'

ঢাকা, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-12 18:33:06

‘আমি রাতে ফেসবুকে কোন সমস্যা নিয়ে লাইভে কথা বললে, সকালে দেখা যায় ২০ লাখ মানুষ দেখে ফেলেছে। তখন হয়তোবা সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের ওপরে চাপ পড়ে। কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে গিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলেন। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের লোকজন সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকেন যে, ব্যারিস্টার কখন এসে লাইভ দিয়ে ফেলেন।’


কথাগুলো ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। কর্মজীবনে আইনি পেশার পাশাপাশি যুক্ত আছেন সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাগরিক সমস্যার নানা বিষয়ে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন।

আলোচিত এই ব্যক্তি কখনও আবর্জনার স্তূপে কখনও চলন্ত গাড়ি থামিয়ে সড়কের পাশে আবার কখনও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভে তুলে ধরছেন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। তাৎক্ষণিক এসব সমাধান হওয়ায় অনেকেই তাকে ফাটাকেস্ট বলে আখ্যা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।


বার্তা২৪.কম-এর একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন জানালেন তার এমন উদ্যোগের নানা গল্প। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল এ আইনজীবীর আলোচারিতা তুলে ধরেছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মুজাহিদুল ইসলাম।


ব্যারিস্টার সুমন জানালেন, আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) হিসেবে কাজ করছি। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে যে সময়টুকু নিজের জন্য থাকে, তার পুরোটাই আমি আমার জন্মস্থানের বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলো নিজের সামর্থ্যে সমাধানের চেষ্টা করি। তবে যদি দেখি সমস্যাগুলো নিজের সামর্থ্যে সমাধান করা যাবে না তাহলে  সেগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরি যাতে এসব সমস্যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং সমাধান হয়ে যায়।

দেশ ও মানুষের সেবা করতে হলে জনপ্রতিনিধি হতে হয় না জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে প্রতিটা মানুষই তার জন্মস্থান এবং তার দেশের জন্য নেতা। সেবা করার জন্য এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার হতে হবে, এমনটায় আমি বিশ্বাসী নই। আপনি ডাক্তার হতে পারেন, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেন। আপনিও কোন না কোন জায়গার সাংঘাতিক রকমের অভিভাবক হয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশে প্রচলন আছে, যে যার পেশা নিয়ে থাকবে। আমাদের বৃত্তের বাইরে বের হয়ে আসতে হবে। ধারণা বদলাতে হবে।

জীবনের প্রথম উদ্যোগে ‘পাগল’ খেতাব পেয়েছিলেন, অনেকেই বলছিলেন এসব ব্যারিস্টার সাহেবের ‘নাটক’। তবে দমে যাননি তিনি।

প্রথম কাজটা নিয়ে বলেন, আমার এলাকায় ব্রিজের কারণে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। তখন  চিন্তা করলাম আমি তো পাকা ব্রিজ করে দিতে পারবো না। আমি কাঠের ব্রিজ বানানো শুরু করলাম। প্রথমে মানুষজন বলতে লাগল যে ব্যারিস্টার পাগল হয়ে গেছে, ব্যারিস্টার নাটক করতেছে, ব্যারিস্টার নেতা হতে চায়। এসব তো আমি সহ্য করে নিলাম। এভাবে একটা দুইটা করে বানাইতে বানাইতে যখন আমি তেইশটা ব্রিজ বানিয়ে ফেললাম, তখন মানুষ বুঝতে শুরু করল না, ওর মনে হয় ভিতর থেকে আসে কাজগুলো। এখন মানুষ দেখতেছে যে, অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে মানুষের কষ্ট কমতেছে। হয়তো আমি চাচ্ছিলাম আমার এলাকাকে সামনে দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমার বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

কাজ পাগল এই মানুষটি মনে করেন, সবাই যার যার জায়গা থেকে  মানুষের সেবায় এগিয়ে আসলে দেখুন, পুরো দেশের উন্নয়ন হবে।

‘আপনি কখনোই সারাদেশে আপনার কাজ ছড়িয়ে দিতে পারবেন না । আমি কত কাজ করতে পারি? আমি চাই, সবাই তার জন্মস্থানে দুই দিন হলেও যাক। মাসে একবার না পারেন দুই মাসে একবার যেতে পারে। কারণ, আমার জন্মস্থানের জন্য যে টান অনুভব করি নিশ্চয়ই আপনার বাড়ির জন্য আমি এই টান অনুভব করি না। আপনিও আমার বাড়ির জন্য এই টান অনুভব করেন না। নিজের বাড়িতে শুধু ঈদে গেলে হবে? যাবেন মানুষের জন্য, যারা আপনার জানাজায় থাকবে। আপনার জানাজায় তো আমি থাকবো না। আপনার জানাজায় আপনার এলাকার লোকজন থাকবে। তো এদের জন্য কিছু একটা করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য যদি আমি এসব কাজ করে থাকি, আমিতো জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছি। তাহলে আমি এখনো কাজগুলো কেন করছি। তারপরেও আমার এলাকায় ২৩ টি ব্রিজ তৈরি করেছি। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য হলেও আপনারা এলাকায় একটা ব্রিজ বানান না।  আগে একটা ব্রিজ বানান, ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে বলুন আমি অমুক বলছি। একটা ব্রিজ বানিয়েছি এখানে। আপনারা নিজেরা কাজ করবেন না, অন্যরা করলে আপনারা আবোল-তাবোল কথা বলবেন।

'ফাটাকেস্ট' বা 'হিরো’ উপাধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি হিরো না। কয়েকটা ভালো কাজ করি মানে এই নয় যে,  আমি ভালো লোক হয়ে গেছি। আমারও সীমাবদ্ধতা আছে।  আমি কাউকে বলি নাই যে, আমার চরিত্র পীর সাহেবের মত। আমি একজন সাধারণ মানুষ। একটাই বিষয়, মানুষের কষ্ট দেখলে আমার খারাপ লাগে। আর এই যে ফাটাকেস্ট বা অন্য যে নামই বলেন,  ব্যাপারটা হচ্ছে আমার কথা লোকজন শুনতে শুরু করেছে।

তরুণদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার সুমন আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভালো কাজ করলে বাধা আসবেই। এতে ভয় পেয়ে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশে যতো আন্দোলন সফল হয়েছে আস্তে আস্তে গড়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই জনস্রোত চলে আসে নাই। আস্তে আস্তে আপনি আপনার বক্তব্য গুলো দিতে থাকেন, আপনি চিৎকার করতে থাকেন, আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার আওয়াজগুলো পৌঁছে দেন। দেখবেন মানুষ একটা সময় নেমে  আসতে বাধ্য। সিস্টেমগুলো বদলাতে হবে। শুধু নেতা বদল করে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর