কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সনাতন পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
বর্জ্য অপসারণে মাস্ক, গ্লাভস, বুট জুতা, হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে তাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত রেইনকোর্টের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয় তাদের।
রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দৈনিক গড়ে পাঁচ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। আর এই বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করেন প্রায় ১২ হাজার কর্মী। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশন আধুনিক হলেও বর্জ্য অপসারণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের এখনো আধুনিকায়ন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনেকবার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে এক রকম সনাতন পদ্ধতিতেই চলছে দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন- মাস্ক, গ্লাভস ও বুট জুতা ছাড়াই ময়লা সংগ্রহ ও পরিষ্কার করছেন উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। পাশাপাশি তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আবুল বাসার। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, ‘সিটি করপোরেশন থেকে তো কোনো কিছুই দেয় না, দিলেও অনেক কম পাই, আর তা কিছুদিন পর নষ্ট হইয়া যায়। আর যে বেতন পাই, তা দিয়ে বুট কেনার ক্ষমতা নাই।’
কাজ করতে গেলে কোনো অসুবিধা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে অনেক সময় ব্লেড দিয়া হাত, পা কাইটা যায়, আবার মাঝে মাঝে অসুস্থ হইয়া পড়ি। কিন্তু কী করুম, এইটা তো আমার কাজ।’
আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাহাবুব বলেন, ‘অসুস্থ তো মাঝে মাঝেই হই, কিন্তু কাম বন্ধ করলে কী খাইমু। আপনারা আছেন, যদি কিছু গ্লাভসের ব্যবস্থা কইরা দিতে পারেন, তাহলে উপকার হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সিটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে সবাই দলিত শ্রেণীর। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই। আর এর জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো রকমের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই৷’
এই বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এয়ার কমোডর মোঃ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করেন, তাদের জন্য মাস্ক, বুটসহ অনেক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকি। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা যে ডিমান্ড দেই তা ফান্ড স্বল্পতার কারণে একসাথে সরবরাহ করা যায় না। যতটুকু পারা যায় তা সরবরাহ করি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তারা নিজেরাও এইগুলো ব্যবহার করে না। ডিমান্ড দেয়া আছে, সামনে বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য রেইনকোর্টের ব্যবস্থা আমরা করছি। পাশাপাশি তাদেরকে কোনো প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যায় কিনা তাও দেখছি।’
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় কিনা জানতে চাইলে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জাকির হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এই সংক্রান্ত কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ভেতরে। যদি তারা আমাকে বলে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নিব। বিষয়টিকে তাদের তুলে ধরতে হবে।’
এক বেসরকারি প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা শহরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মধ্যে ৭০ ভাগ পিঠে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত।