মুজিব বর্ষের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-25 08:43:05

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে আমরা ঘোষণা করেছি। এই ‍মুজিব বর্ষ আমরা উদযাপন করব এজন্য কমিটি করে দিয়েছি। আমি চাই সারা বাংলাদেশে একেবারে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি এলাকায় এখন থেকে সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতির পিতার এই জন্মদিন থেকেই আমাদের শুরু হবে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি। আমরা সেই মুজিব বর্ষের প্রস্তুতি নেব। কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।’

দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার এই জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষের কাছে আমরা একটাই আহ্বান, আর যেন এই বাংলার মাটিতে ওই স্বাধীনতা বিরোধী খুনি সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী এরা যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই বাংলাদেশ মুজিবের বাংলাদেশ। কাজেই এই বাংলাদেশে জনগণের অধিকার সমুন্নত হবে।’

কেবল মহান মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভাষা আন্দোলনেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসামান্য অবদান রেখেছেন। হাতেগোনা দুয়েকজন সে অবদানের কথা বললেও অনেকেই সেসব কথা বলতেন না বলে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান, সে ইতিহাস হারিয়ে গেছে। অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও উল্লেখ করতেন না তার অবদান। ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ওই বছরই তিনি ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তার এসব অবদানের কথা অনেকেই জানতেন, কিন্তু লিখতেন না, বলতেন না।’

প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বলেন, ‘জাতির পিতার অবদানের এসব তথ্য একসময় মুছে দেওয়া হয়েছিল। জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যেসব রিপোর্ট করে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি সেসব রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিলাম। সেসব গোয়েন্দা রিপোর্টেই ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা কী করেছিলেন, সেসব তথ্য সংগ্রহ করি। তখন আমি ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক বক্তব্য দেই। অনেকেই তখন আমার বিরুদ্ধে লেখা লিখেছিলেন। তারা বলেন, আমি নাকি তথ্য আবিষ্কার করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ অবশ্য সেসব কথার উত্তরে লিখলেন। কিন্তু আজ সেই সত্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, গোয়েন্দা নথি- এগুলো একে একে প্রকাশ করতে শুরু করেছি। এরই মধ্যে দুই খণ্ডে গোয়েন্দা নথি বের হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ১৯৫২ সালে জাতির পিতা যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোর কথা। তিনি জেলখানায় থেকেই কিভাবে যোগাযোগ করেছেন, কিভাবে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, এমন সব তথ্য পাওয়া যাবে এই খণ্ডে। খুবশিগ্রই ১৯৫৩ সালের যে খণ্ডটা সেটা বের হবে। সেখানে আরও তথ্য পাওয়া যাবে যে তিনি কিভাবে আন্দোলন করেছেন।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সেই যে ভাষা আন্দোলন, সেই থেকেই কিন্তু স্বাধীনতার সূচনা। ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। ফিরেই কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদার যে আন্দোলন, তা ফের শুরু করেন। তিনি আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময়ই তিনি বুঝতে পারলেন, এরা (পশ্চিম পাকিস্তানি) তো আমাদের নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে দেবে না। এরা যেভাবে অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, তাতে আর এই হানাদার-পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা যাবে না। এভাবে দেশ চলে না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, সেই চিন্তা ওই ভাষা আন্দোলনের সময়ই বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় আসে। ১৯৫৮ সালে যখন আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে গ্রেফতার করে, তখন থেকেই তার পরিকল্পনা- আর নয়, এবার স্বাধীন হতে হবে।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১-২০০৮ পর্যন্ত দু:সময় পার করে ২০০৮ এর নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। এই নির্বাচনে ৮৪ ভাগ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৮টা সিট পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ সেখানে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের যে নির্বাচন, সে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। জনগণ প্রতিরোধ করেছিল। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যত সার্ভে রিপোর্ট এসেছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে আমাদের যে উন্নয়নের কর্মসূচী, এক দশক ধরে দেশের উন্নয়নে যে কাজ আমরা করেছি, যে উন্নয়নের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতার পথে এগিয়ে গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছি, মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছি, মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে এসেছে তাই জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে।’

বিএনপি জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা দল নির্বাচিত হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা দেখাতে পারছেন না। দুর্নীতি হত্যা খুনের মধ্যদিয়ে তাদের নেতারা জেলে অথবা বিদেশে পলাতক, ঠিক সেই অবস্থায় নির্বাচন। ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। জামাত একটা সিটও পায়নি। বিএনপি নামকাওয়াস্তে সিট পেয়েছে। কেননা ৩০০ সিটে যখন ৭০০ কাছাকাছি নমিনেশন দেয় তখন মানুষের ভোট পাবে কীভাবে?

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মহিলা সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, সদস্য আজমত উল্লাহ খান, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ আরও অনেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর