অ্যাপভিত্তিক যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-23 20:27:03

সড়কে অ্যাপভিত্তিক মোটরযান সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে ‘রাইড শেয়ারিং নীতিমালা ২০১৭’ করছে সরকার। অ্যাপভিত্তিক এ পরিবহনে যাতায়াতে ভাড়া নির্ধারণ হবে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০-এর আওতায়। ব্যক্তিগত যানবাহন বিশেষ করে মোটরযান, জিপগাড়ি, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সা, অ্যম্বুুলেন্স নীতিমালার আওতায় আসবে। নীতিমালার আওতায় থাকছে না মোটরসাইকেল রাইড সেবা। অ্যাপভিত্তিক এ পরিবহন সেবায় যাতায়াতে ভাড়া নির্ধারন হবে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০-এর আওতায়। সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয় এ নীতিমালা চূড়ান্ত করে সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী পরিষদে জমা দিয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি মাসেই কার্যকর হতে পারে নতুন এ নীতিমালা। নির্দিষ্ট পথে যাতায়াতে সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চলাচল নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। সড়কে বর্তমানে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত আছে উবার, পাঠাও, বাহন এবং স্যামসহ বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক মোটরযান। প্রস্তাবিত নীতিমালায় একজন মালিক মাত্র একটি মোটরযান রাইড শেয়ারিংয়ের আওতায় পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাইড শেয়ারিং নীতিমালার কোন শর্ত লঙ্ঘন করলে সার্টিফিকেট বাতিলসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এর ফলে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা একটি শৃঙ্খলার আওতায় আসবে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত যানবাহন কেনার হার কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা নিয়ে স্টেকহোল্ডার ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ নীতিমালা চুড়ান্তে অন্যদের মতামত এবং অ্যাপ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, বিশ্বের বহু দেশেই অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করে ব্যক্তিগত গাড়ি হ্রাস করেছে। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মোটরযানের মালিক নিজ প্রয়োজন মিটিয়ে অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় পরিচালনা করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই এটিকে নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। ব্যক্তিগত মোটরযান ভাড়ায় চালানোয় বর্তমানে দেশে কোন আইন ও বিধিবিধান নেই। সেই ক্ষেত্রে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ৫৩ ধারার ক্ষমতাবলে পরীক্ষামূলকভাবে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালুর জন্য এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। খসড়া এ নীতিমালায় যাত্রীদের জন্য কিলোমিটার প্রতি ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। তবে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত মোটরযানের ভাড়া সিএনজি ও ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়ার চেয়ে বেশি হতে পারবে না। শেয়ারিং সার্ভিসে যুক্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০০ মোটরযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ও মোটরযানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট থাকতে হবে। তবে ভাড়ায় চালিত হিসেবে রেজিস্ট্রেশনকৃত রুট পারমিটধারী মোটরযানের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। নীতিমালার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার পর কমপক্ষে এক বছর ব্যবহারের পর তা রাইড শেয়ারিংয়ের অধীনে পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করা যাবে। রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঢাকায় ন্যূনতম ১০০, চট্টগ্রামে ৫০ ও অন্যান্য শহরে ২০টি গাড়ি থাকতে হবে। এসব গাড়ি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নিবন্ধিত হতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির জন্য এক লাখ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন, ভ্যাটসহ সংশ্লিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে ১০ হাজার টাকা দিয়ে নবায়নের আবেদন করতে হবে। আর প্রতিটি মোটরযান ও বাইকের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের জন্য প্রতিবছর যথাক্রমে এক হাজার ও ৫০০ টাকা হারে চার্জ প্রযোজ্য হবে। মোটরযান চালকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, বর্তমান ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সংরক্ষণ করতে হবে। যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের জন্য এসএমএস ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিটি যাত্রা পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চালক ও অ্যাপে বিশেষ বিধান থাকতে হবে যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে । রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে সার্টিফিকেট বাতিল ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারবে বিআরটিএ। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণও করা যাবে। একইভাবে শর্ত ভঙ্গ করলে মোটরযান মালিক ও চালকের লাইসেন্সও বাতিল এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কোনো কারণে ভাড়াসংক্রান্ত যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্ধারণ বা পুনর্র্নিধারণ করতে পারবে। এছাড়া যাত্রা শুরুর আগে সম্ভাব্য ভাড়া সম্পর্কে যাত্রীকে জানানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই এ নীতিমালা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, এতে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সার্ভিসে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর