চট্টগ্রামের পুরাতন ফিশারিঘাটের কর্ণফুলী রাস্তায় গুইসাপকে মারার জন্য ১০ থেকে ১২ জন শিশুর একটি দল ইট ও পাথর ছুঁড়ে মারছে । রাস্তা ধরে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছে বিলুপ্ত প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণিটি। কিন্তু দেহের ওজন বৃদ্ধির কারণে দ্রুত পালাতে সক্ষম নয় এটি। শিশুদেরও থামানোর কেউ নেই। গুইসাপটি পর্যায়ক্রেমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। পরে একটি ঝুপড়ি দোকানে ঢুকে পড়ে। এ সময় ওই দোকানে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
বুধবার (২০ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের পুরাতন ফিশারিঘাটের নেভাল-২ এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। পরে কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি এগিয়ে এসে ওই গুইসাপটিকে ধরে আবার পাশের ছোট ডোবায় ছেড়ে দেয়। ফলে প্রাণে রক্ষা পায় প্রাণিটি।
স্থানীয় মোহাম্মদ জাফর আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই এলাকায় প্রায় সময়ই গুইসাপ দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এ ধরনের প্রাণিকে পিটিয়ে মারা হয়। কারণ অনেকের ধারণা গুইসাপের লেজে বিষ আছে। আবার এলাকায় লোকজনদের সচেতনতারও অভাব রয়েছে।’
জানা যায়, গুইসাপ সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণি। বন জঙ্গল, ঝোপঝাড, বাস্তুবন ও কৃষি জমিতে প্রায়ই দেখা যেত এ প্রজাতির প্রাণিটিকে। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। নিরীহ উপকারী এই প্রাণিটি বিভিন্ন কারণে পরিবেশ থেকে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গুইসাপ আমাদের তেমন একটা ক্ষতি করে না। তবে বেশিরভাগই উপকার করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রাণিটির অবদান সবচেয়ে বেশি। এটি বিষধর সাপ খেয়ে এদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।’
তিনি জানান, বর্তমানে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনোরকম টিকে আছে। এগুলো হল কালো গুইসাপ, সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ। সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো। ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে।
ড. মনজুরুল কিবরিয়া আরও জানান, গুইসাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী। মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে। বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। এদের প্রধান খাদ্য কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর,পচা-গলা প্রাণীদেহ ও উচ্ছিষ্ট। বড় গুইসাপ মাছ, সাপ, ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়। সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয় তারা।