পোড়া গন্ধ এখনো মন পোড়ায় পুরান ঢাকাবাসীর

ঢাকা, জাতীয়

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 20:07:00

মাস পেরোল পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের। সেখানে এখনো থম থমে পরিবেশ বিরাজমান। আগুনের পোড়া গন্ধ বইছে চুড়িহাট্টা মোড়ে। সেই গন্ধে এখনো মন পোড়ায় পুরান ঢাকাবাসীর। তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরিচিত মুখগুলো।

এদিকে আশেপাশের দোকানগুলো খুললেও একমাস আগের মতো প্রাণচঞ্চল চুড়িহাট্টার মোড় এখন আর জমে না। চলাফেরার সময় মানুষ শুধু তাকিয়ে থাকে আগুনে পোড়া ভবনের দিকে। স্মৃতিতে সেদিনের দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের ধ্বংসলীলা মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠে এলাকাবাসী। পোড়া বিধ্বস্ত ভবনের দিকে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারা।

শুক্রবার (২২ মার্চ) জুমার দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ভবনগুলো দেখছিলেন ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দোকান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় এ মোড়ে আড্ডা দিতাম। বিশেষ করে এম আর টেলিকমের (ওয়াহেদ ম্যানেশন নিচতলা) দোকানে মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি আমার বন্ধুর মতো ছিলেন। তারা দুই ভাই মারা গেছেন। তারা অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেদিনের ঘটনা ভুলে যাওয়ার নয়। পোড়া ভবনগুলো দেখলে মনে পড়ে পরিচিতদের মুখ। যাদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। এখানে তারা পুড়ে মারা গেছে।’

শামীম বলেন, ‘এই ধাক্কা কেটে উঠতে অনেক সময় লাগবে। দোকানপাট কিছু খুলছে, তবে আমাদের মনে সেই দিনের অগ্নিকাণ্ডের ভয় এখনো গেঁথে আছে। আমরা ভুলতে পারছি না।’

চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশের গলির বাসিন্দা মো. শফিক উদ্দিন। অগ্নিকাণ্ডের দুইদিন আগে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। তাই পোড়া ভবনগুলো দেখতে স্ত্রীকে নিয়ে চুড়িহাট্টার মোড়ে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাসখানেক কলকাতায় থাকার পর দেশে ফিরে আজ (শুক্রবার) সকালেই মোড়ে এসেছি। এসব দোকানে কেনাকাটা করতাম। সবাই আমার পরিচিত। এদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এখনো চুড়িহাট্টা মোড়ে পোড়া গন্ধ ভাসছে। সেই গন্ধ আসছে আগুনে পোড়া দোকানগুলোর মালপত্র থেকে। তবে সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে। পুড়ে যাওয়া চারটি ভবনের মধ্যে ওয়াহেদ ম্যানশনের বিপরীত পাশের ভবনের নিচতলাসহ দুটির মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানশনের বাম পাশের ছয়তলা ভবনটিরও সংস্কারকাজ চলছে।

চেয়ার নিয়ে ভবনের নিচে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায় ভবনটির মালিক মো. আবদুল আজম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সংস্কার কাজ করছি। সবকিছু ঠিকঠাক করলেও আগের মতো হবে না। খরচও পড়বে অনেক টাকা।’

অন্যদিকে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাতজন পরিচ্ছন্নকর্মীকে দোকানের পুড়ে যাওয়া মালপত্র সরাতে দেখে গেছে। এ সময় পরিচ্ছন্নকর্মী মো. সানী মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পোড়া গন্ধের জন্য এলাকাবাসীর অসুবিধা হচ্ছে। তাই পরিস্কার করছি।’

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুন লাগে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহেদ ম্যানসনে। ওই ভবন থেকে আগুন আশেপাশের আরও ৫টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর