গ্রীষ্মের আগেই পানি সংকটে নগরবাসী

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 02:41:07

খুলনা নগরীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় গরমের আগেই পানি সংকট শুরু হয়েছে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পানির অপচয় ও ওয়াসার অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এ সংকট দেখা দিয়েছে।

নগরবাসীর অভিযোগ, দিনভর ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইনে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি গভীর নলকূপেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত পাম্পেও পানি উঠছে না। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন খুলনা নগরীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ। গ্রীষ্মকাল শুরু হলে পানির এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

খুলনা ওয়াসার তথ্য মতে, খুলনা মহানগরীর ১৬ লাখ মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। এর মধ্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ৮৫ টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন ১২ কোটি ১০ লাখ লিটার পানির চাহিদা পূরণ করে। বাকি চাহিদা পূরণ করতে নগরবাসীকে নির্ভর করতে হয় হস্তচালিত গভীর নলকূপ ও বাসা-বাড়ির ব্যক্তিগত পাম্পের ওপর।

চাহিদার শতভাগ পূরণ করতে ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ২০১১ সালে খুলনা মহানগরীতে পানি সরবরাহের জন্য ‘খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ নামে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে খুলনা ওয়াসা। ওয়াসার এই মেগা প্রকল্পের আওতায় মধুমতি নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করা হবে নগরীতে। জাইকা ও এডিবি এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর রূপসা থেকে শিরোমণি পর্যন্ত ৩১টি ওয়ার্ডে ৫৮০ কিলোমিটার পানির সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের প্রথমদিকে। দু’দফা সময় বাড়িয়ে সবশেষ এ বছর মার্চের শেষের দিকে ও এপ্রিলের শুরুর দিকে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে পানি সরবরাহের কথা বললেও এখনো কাজ শেষ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। রাত ও ভোরের দিকে নলকূপ বা পাম্পে কিছুটা পানি উঠলেও দিনভর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে পূর্ব বানিয়া খামার, দোলখোলা, বাগমারা, সাতরাস্তা, ইকবাল নগর রোড, শামসুর রহমান রোড, রূপসা এলাকা, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, গল্লামারী, নিরালা, বয়রা এলাকা, মিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, খালিশপুরের বাসিন্দাদের পানির ভোগান্তির কথা জানা যায়।

নগরীর পূর্ব বানিয়াখামারের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন শাহানুর বেগম। প্রতিদিন তিনটি বাড়িতে নলকূপ থেকে খাবার পানি তুলে সরবরাহ করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে গভীর নলকূপে পানি না ওঠায় ভোগান্তি বেড়েছে তার। শাহানুর বলেন, 'আমার মতো যারা বাসা-বাড়িতে কাম করে, তারা কেউই কলে পানি পায় না। কয়েক এলাকা ঘুইরা পানি আনতে খুব কষ্ট অয়।'

নগরীর সাত রাস্তার মোড়ের বাসিন্দা শারাফাত অনিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমাদের বাড়ির পানির পাম্পে পানি উঠছে না। এমনকি সাবমার্সিবল (গভীর পাম্প) লাগিয়েও কাজ হচ্ছে না। ভোরের দিকে কিছুক্ষণ পানি উঠলেও সারাদিন পানি আসে না। কিছুদিন পর পর ওয়াসা বাড়ির সামনে কাজ করে। পানি না পেয়েও আমাদের নিয়মিত বিল দিতে হয়।'

খালিশপুরের বাসিন্দা শিক্ষার্থী বর্না মীম বলেন, 'ট্যাপে পানি না আসায় ঠিকভাবে কোনো কাজ করা যায় না। এতে প্রতি বছরই গরমের সময় আমাদের ভোগান্তি হয়। কিন্তু এ বছর সমস্যা আরও আগে শুরু হয়েছে।'

ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নেমে গেলে নলকূপ থেকে পানি উঠানো যায় না। এছাড়া পানির স্তর ৩০ ফুটেরও নিচে নেমে গেলে পাম্পেও পানি ওঠে না। নিয়মিত বর্ষা হলে এ পানির সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া কিছুদিন পরেই ওয়াসার মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ওয়াসার মেগা প্রকল্পে দুদফা সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে কোনো খরচ বাড়েনি। এ মুহূর্তে শেষ ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। পাইপ লাইনের শেষ ফিটিংস ও নগরীর প্রতিটি বাড়িতে সংযোগের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে।' এ সময় পানির অপচয় রোধ করে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আগামী জুনের ভেতরে আমাদের মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তখন প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা হবে।'

উল্লেখ্য, প্রতিবছরই গরমের সময়ে পানির প্রকট সমস্যা দেখা দেয় খুলনা নগরীতে। তবে এ বছর গ্রীষ্মের পূর্বেই পানির সংকট শুরু হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর