রাজশাহীর পদ্মার চরে সবুজের সমারোহ

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 08:23:23

শুকিয়ে গেছে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি। জেগে উঠেছে চর। বেশিরভাগ এলাকায় ধু-ধু বালুচর হলেও কোথাও কোথাও জমেছে পলি মাটি। আর সেই উর্বর পলি মাটিতে চাষাবাদে নেমে পড়েছেন অনেকেই। ফলে চরে এখন সবুজের সমারোহ। চাষ হওয়া ফসলের মধ্যে ডালের চাষ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য রবি ফসলও চাষ হচ্ছে সেখানে। অনেকে আবার রোপণ করেছেন বোরো ধান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহীর পদ্মার চরে চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৬ হেক্টর। রাজশাহী মহানগরী ছাড়াও বাঘা, চারঘাট, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় রয়েছে এসব জমি। নদীর বাম পাশে গ্রাম ঘেঁষে এসব জমিতেই প্রতিবছর চাষাবাদ হয়। কম খরচে উৎপাদনও ভাল হয়। তাই ভূমিহীনরা সেই চরে প্রতিবছরই চাষাবাদ করেন।

এদিকে রাজশাহী নগরীর বিনোদনের কেন্দ্র পদ্মা নদীর পাড়। বিকেল হলেই দেখা যায় বিনোদন প্রেমীদের ভিড়। এখানে অনেকেই আসেন সময় কাটাতে। কেউ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা আসেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।

বর্ষা মৌসুমে পদ্মার এক রূপ, আর শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার আরেক রূপ দেখা যায়। এখন পদ্মার পাড় সবুজে ছেয়ে গেছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যেন চারিদিকে খেলা করছে। সবুজের সমারোহ এই পদ্মার পাড় এখন সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে পদ্মার পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ধু-ধু বালুচরে এখন কেবলই সবুজের সমারোহ। রাজশাহীর লালনশাহ্ মুক্তমঞ্চের নিচ থেকে শুরু করে পশ্চিমে টি-বাঁধ এলাকা পর্যন্ত শত শত হেক্টর জমিতে এবার ডাল ফসল মশুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হয়েছে। যেদিকে যতদূর চোখ যায় চারিদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। মরা পদ্মার বুক চিরে যেন ফল ও ফসলের বিপ্লব ঘটেছে।

পদ্মার পাড়ে ঘুরতে গিয়ে তৌসিফ কাইয়ুম বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আসি পদ্মার পাড়ে ঘুরতে। নিজেকে সতেজ করার জন্য আমরা এখানে আড্ডা দেই। এখন ফসলের কারণে চারিদিক সবুজের ঢেকে যাওয়ায় পরিবেশ আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে।’

আরেক দর্শনার্থী আলম হোসেন বলেন, ‘পদ্মার চর আশার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। শস্য-শ্যামলে পরিপূর্ণতা পেয়েছে পদ্মার পাড়।’

মুক্তমঞ্চ এলাকার কৃষক এজাজুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চরে সাধারণত মসুর ও খেসারি ডাল ভাল হয়। তাই তিনি এবার প্রায় তিন বিঘা জমিতে ডাল চাষ করেছেন। এসব চাষ করতে বেশি খরচ হয় না। এবার প্রায় চরেই মসুর ও খেসারি ডালের চাষ হয়েছে। এসব ফসল চাষের জন্য সেচেরও প্রয়োজন হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে চরের জমিতে সরিষা ও গমের ভাল ফলন হতো। গম চাষ করতে হলে পানি ব্যবস্থা রাখতে হয়, যা আমাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। সে কারণে অনেকেই গম চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এখন খুব অল্প সংখ্যক কৃষক আছে যারা গম চাষ করেন। এছাড়া ভুট্টা এবং বাদামও চাষ করেছেন কেউ কেউ।’

আরেক চাষি আবুল কালাম জানান, বিভিন্ন এলাকার চরে শ্যালো মেশিন বসিয়ে ধানেরও চাষাবাদ চলছে। তিনি নিজেও নগরীর আলুপট্টি এলাকার নিচে পদ্মার চরে ধান চাষ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, গেল বছরের চেয়ে এবার ফলন ভাল হবে। কেন না, এবার যে জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে সেখানকার মাটি ছিল কর্দমাক্ত। তাই সার প্রয়োগ ছাড়াই ধানের গাছ বেড়ে উঠছে দ্রুত।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘চরে কৃষকরা যেন ভালভাবে চাষাবাদ করতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা প্রযুক্তিগত এবং তথ্য বিষয়ে সার্বিকভাবে সহাযোগিতা করছি। কোন মৌসুমে কি ধরনের ফসল চাষ করতে হয়, কীভাবে বীজ বপন ও চারার পরিচর্যা করতে হয় সে বিষয়গুলোও কৃষকদের জানাই। এর ফলে কৃষকরা ভালভাবে চাষাবাদ করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চরে নানা ধরনের ফসল চাষ হলেও এবার ডালের চাষ অনেক বেশি হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো বিপদ-আপদ দেখা দেয়নি। চরে মসুর, খেসারি, মাস কালাইয়ের চাষাবাদ বেশি হলেও এখন ধান, ভুট্টা, বাদাম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোল, টমেটো, আলু, মরিচ, পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলেরও চাষাবাদ হয়। উর্বর পলি মাটির কারণে উৎপাদনও হয় ভাল। এতে চাষিরা লাভবান হন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর