রোগী ও স্বজনদের নির্বিঘ্নে চলাচল এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অভ্যন্তরে যে কোনো ধরনের যানবাহন পার্কিং নিষেধ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সাইনবোর্ডের সামনেই যতযত্র পার্কিং করে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা।
পার্কিংয়ের মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী, ওষুধ কোম্পানির এমআর এমনকি বহিরাগতদের গাড়ি-মোটরসাইকেল রয়েছে। ফলে যানবাহনের বিকট শব্দ আর বহিরাগতের আনাগোনায় রোগীদের অস্বস্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা বলছেন, 'সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে কেবল কাগজে কলমে দায়িত্ব সারছেন কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিরুপায়। নাগরিকদের সচেতন হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।'
সূত্র জানায়, হাসপাতালের নিচ তলায় জরুরি বিভাগ হওয়ায় অত্যধিক রোগীর চাপ থাকে। রোগীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যে হাসপাতালে অভ্যন্তরে পার্কিং নিষেধ করা হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন স্পটে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা রোগী, স্বজন ও হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ সারতে আসা লোকজনের যানবাহন মাঠে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ মার্চ) হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রধান প্রবেশ মুখের সাইনবোর্ডের সামনে বেশ কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং করা। সেখানে সাঁটানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, পার্কিংয়ের আদেশ অমান্য করলে চাকা পাঞ্চার করে দেওয়া হবে।
পার্কিংরত এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বেশিক্ষণ থাকব না। ভাড়া পেলে চলে যাবেন।'
হাসপাতালে ডিসপেনসারি একটু ডানে একজনের মোটরসাইকেল পার্কিং করা। আনসার সদস্যরা দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন।
সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্য হাবেল উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। কিছু জানার প্রয়োজন হলে দুই তলায় স্যার আছেন ওইখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পার্কিং করছে আপনারা নিষেধ করছে না এমন প্রশ্নে হাবেল বলেন, 'পার্কিং করা মোটরসাইকেলটি অনেক বড় স্যারের, বড় চিকিৎসক। কেবল আমি না সবাই চিনে। তারে কেমনে নিষেধ করমু।'
এরপর হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ও জরুরি ওয়ার্ড, পশ্চিম এবং পূর্ব গেইটেও সারিবদ্ধভাবে মোটরসাইকেল দেখা যায়।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন মাসসুদুল হক বার্তা২৪.কম-কে অভিযোগ করেন, 'সকাল থেকে দেখছি মোটরসাইকেল ও বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঘুর ঘুর করছে।'
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে সাইনবোর্ড সাঁটানোকে হাস্যকর বলে দাবি করেছেন হাসপাতালে আসা লোকজন।
এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক আখতারুল ইসলামের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, এক্ষেত্রে আমাদের কি করার আছে। আমরা সাইনবোর্ড দিয়ে সচেতন করেছি। এরপরেও কেউ যদি সাইনবোর্ড উপেক্ষা করে গাড়ি রাখে আমাদের কি করার থাকে।
বহিরাগতের পাশাপাশি চিকিৎসকরা পার্কিং করছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, ওষুধ কোম্পানির এমআর সবাই এক। যতদিন পর্যন্ত এরা সচেতন এবং দায়িত্বশীল হবে না এমন অবস্থার পরিবর্তন হবে না বলেন মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির কোনো সদস্য কথা বলতে রাজি হয়নি।