অটোগ্রাফের বদলে সেলফিবাজদের ‘মধুর’ যন্ত্রণায় জাফর ইকবাল

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 14:03:49

স্মার্টফোন হাতে হাতে পৌঁছানোর পূর্বে বইমেলায় বসে বসে অটোগ্রাফ দিতেন কবি-সাহিত্যিক ও লেখকরা। ড. জাফর ইকবাল এর মতো বড় মাপের লেখকরা বই মেলায় আসা মানেই কাগজ কলম হাতে ভক্তের ছুটে যাওয়া। উদ্দেশ্য একটাই, অটোগ্রাফ।

কিন্তু হালের সময়ে সেই ধারায় ছন্দপতন ঘটেছে। ড. জাফর ইকবাল এখন অটোগ্রাফের বদলে সেলফিবাজদের শিকারে পরিণত হন। তাকে ঘিরে চলে অনবরত সেলফি তোলার হিড়িক।

এ নিয়ে অবশ্য মনে ব্যথা নেই জাফর ইকবালের। তবে সেলফি তোলার সময়ও তিনি সানন্দে লক্ষ্য রাখেন সেই তরুণ কিংবা তরুণীর হাতে বই রয়েছে কিনা। যখন হাতে বই না থাকে তখনই হাপিত্যেশ করেন বরেণ্য এই লেখক ও বুদ্ধিজীবী।

বইমেলার সেকাল-একালের এমন ব্যবচ্ছেদ ড. জাফর ইকবাল নিজেই করলেন। আর এই ব্যবচ্ছেদের মূল কারণটি ছিল, সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে তিনি যখন ময়মনসিংহের টাউন হল মাঠে বিভাগীয় বইমেলায় আসেন, তখন থেকেই সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে তাকে ঘিরে। দীর্ঘ এক জটলায় তাকে সময় দিতে হয় অন্তত আধঘণ্টা। তবুও সেলফি তোলা যেন শেষ হয় না। মোবাইল ক্যামেরার ‘ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাশ’ আওয়াজে মধ্যমণি হয়ে সবাইকে সেলফি তোলার সুযোগ দিয়েই যেন স্বাচ্ছন্দ্য তার।

সেলফিবাজদের পীড়াপীড়িতে এক পর্যায়ে ড. জাফর ইকবাল নিজেই বললেন, 'তোমরা শান্ত হও, তোমাদের সঙ্গে সেলফি না তুলে আমি এখান থেকে যাবো না।'

এক সময় যে জাফর ইকবাল অটোগ্রাফ দিতেন, এখন তাকে ঘিরে পড়ে যায় সেলফি তোলার ধুম। আর সেই কথাটিই বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিজে আওড়ে যান প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, 'আমি বইমেলায় আগে বসে বসে অটোগ্রাফ দিতাম বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। এখনো বসে থাকি, তবে অটোগ্রাফ দেওয়ার বদলে সেলফি তুলি। যারা আসে তারা ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলে। তারা বইকে ভালোবেসে আসে কিনা এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত না।'

গণিত অলিম্পিয়াডে ড. জাফর ইকবাল গেলে তিনি গণিত নিয়ে কথা বলতেন না, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে গেলেও সেখানে সেই বিষয়ে কথা বলতেন না। জাফর ইকবাল নিজেই জানালেন এমন তথ্য। তিনি বললেন, 'বইমেলায় এসেছি তবে আজকে বই নিয়ে কিছু কথা বলতেই হবে। পৃথিবীতে সমস্ত মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একভাগ হচ্ছে যারা বই পড়ে এবং আরেক ভাগ যারা বই পড়ে না। যারা বই পড়ে তারা পৃথিবীকে চালায়। যারা বই পড়ে না তারা পেছনে পেছনে হাঁটে আর সেলফি তোলে। বই পড়া খুবই জরুরি ব্যাপার।'

তিনি বলেন, 'সব জায়গায় ছেলে মেয়েদের বলে বেড়াচ্ছি- প্লিজ তোমরা মানুষ হও। একজন মানুষ আরেকজনের দিকে তাকায়। ফেসবুকে তোমরা পোস্ট দিয়ে অপেক্ষায় থাকো, কত লাইক পড়লো? এটাকে জীবন বলে না। এই জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তোমরা কম্পিউটার হয়ে যেও না, তোমরা মানুষ হও। মানুষ হওয়ার সবচেয়ে সহজ নিয়ম বই পড়া।'

ড. জাফর ইকবালকে ঘিরে তরুণ তরুণীদের যে উন্মাদনা, সেই উন্মাদনায় মুগ্ধ হয়েছেন স্বয়ং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে অতিথিরাও। আর এ কারণেই কিনা সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তাকে প্রস্তাব দিয়েছেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ড. জাফর ইকবাল হবেন আলোর মশাল। জাফর ইকবাল নেতৃত্ব দেবেন মুজিব বর্ষে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধী রোড মার্চে।

অনুষ্ঠান মঞ্চে সবার সামনেই স্বয়ং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু তাকে এই প্রস্তাব দিলেন। অবশ্য তার এ প্রস্তাবে না করার সুযোগ নেই ড. জাফর ইকবালের। কারণ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নিজের মুখেই বলেছেন, ‘স্বাধীনতার প্রতি তার (জাফর ইকবাল) রয়েছে দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্র এবং পতাকার প্রতি তার গভীর আনুগত্য। আর তিনিই হবেন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মুখ্য হাতিয়ার, বিবেকের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।'

বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কথা রাখলেন ড. জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নেমে ফের চলে গেলেন অপেক্ষারত সেই তরুণ-তরুণীদের কাছে। অত:পর শিকার হলেন সেলফিবাজদের ‘মধুর’ যন্ত্রণায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর