বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে। বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাপত্র বেতারে প্রচারের পাশাপাশি শত-শত কপি ছাপিয়ে বিলিও করা হয় দেশের সর্বত্র। ঐতিহাসিক সেই ঘোষণাপত্র ছাপানোর নেপথ্যে রয়েছে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন। এটি মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মৃতি হিসেবে আজও সংরক্ষিত রয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা সরকারি কলেজে।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে আটকের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পাঠান। আর সে ঘোষণাপত্রটি ব্যাপক প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে নেতারা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নগরীর জুপিটার হাউসে বৈঠকে বসে সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রে ঘোষণাপত্রের অসংখ্য কপি ছাপান। সেগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এরপর মেশিনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় জুপিটার হাউজেই পরে থাকে। তবে দেশ স্বাধীনের পর মেশিনটি আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসা থেকে কলেজের জন্য চেয়ে নেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান। সেটি দিয়ে কলেজের প্রশ্নপত্র ছাপানোসহ নানা কাজ করা হতো।
২০১৭ সালে ২৮ আগস্ট এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ নৌ-শিক্ষা কেন্দ্র বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৫ বছর পূর্তির এক অনুষ্ঠানে এটি প্রদর্শন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোচিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র ছাপানোর ঐতিহাসিক মেশিনটি বর্তমানে আনোয়ারা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে কাঁচের বাক্সে মেশিনটি সংরক্ষণ করা।
আনোয়ারা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাছরিন সুলতানা শিমু বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ছাপানো সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি আমাদের কলেজে আছে- এটা ভাবতেই ভালো লাগে। স্বাধীনতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে। এটি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য গর্বের।’
আনোয়ারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ফজল আহমদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘মেশিনটি সর্বসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা দেখার জন্য উম্মুক্ত রাখতে আমি আমি কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে।’
আনোয়ারা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. রিদুয়ানুল হক বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ছাপানো সেই সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি আমরা কলেজে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নির্দেশে এবং কলেজের পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে মেশিনটি কলেজে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মেশিনটি বর্তমানে শিক্ষার্থী ও দর্শণার্থীদের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। আমাদের কলেজে যন্ত্রটি থাকায় আমরা গর্ববোধ করি।’