কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়, নিজ তাগিদে মানবিক এবং নৈতিক অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। অন্য সবার চেয়ে দেশপ্রেম, দায়িত্ব এবং ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ থেকেই তাঁরা জীবন বাজি রেখে নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়েছেন। তাঁরা যেন কোনোভাবেই সামাজিকভাবে নিজেদের ছোট না ভাবেন। দেশের উন্নয়নে সামনের দিনগুলোতেও তাদের পরামর্শ, অংশীদারিত্ব দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্জনে ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আপনারা (মুক্তিযোদ্ধা) নিঃস্বার্থভাবে আত্মীয়স্বজন, পরিবারকে না জানিয়ে পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তখন যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করতেন আজ আমাদের পাকিস্তানের মতো বর্বর ও ব্যর্থহীন একটি দেশের নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকেতে হতো। মানবিক এবং নৈতিক অবস্থান ঠিক ছিল বলেই আপনারা আজ স্বাধীন এবং সার্বভৌম জাতি উপহার দিতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব না হলে অনেকেই আজ অর্থের অভাবে, সুচিকিৎসার অভাবে মারা যেতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাতা, সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছেন। এতো অল্প সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা কোনো দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের এতো সুবিধা দিচ্ছে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, আমি চাকরি ছেড়ে দেব। দিনমজুর, চা দোকানি যাই হোন না কোনো, আপনার মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। কোটি কোটি টাকা দিয়ে এই সম্মান বড় শিল্পপতি কিংবা ধনাঢ্য কোনো ব্যক্তি পাচ্ছে না। কখনোই আপনারা নিজেদের ছোট ভাববেন না। এখনো দেশকে আপনারা অনেক কিছু দিতে পারেন। নিজের ছেলে-মেয়েদের মৃত্যুর আগে বলে যান তারা যেন কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত না হয়।’
বিভাগীয় কমিশনার তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে পাশ্ববর্তী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবী যদি বাংলাদেশর স্বাধীনতা বিরোধী করতো এরপরও ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকতো। আদর্শ এবং মানবিকগত কারণে তারা আমাদের সহায়তা করেছে।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘প্রশাসনিক বাধ্যবাধাকতার কারণে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে বক্তব্য প্রদান করতে হয়। আমি খুব বিব্রত এবং অস্বস্তিবোধ করি। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বড় কোনো শক্তি এবং সম্পদ নেই। তাঁরা সব ধরনের লোভ-লালসা উপেক্ষা করেছিলেন বলে আজ আমরা স্বাধীন একটি দেশে বসবাস করতে পারি।’
এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘কে বলছে আপনাদের এতো তালিকা করার, কে বলছে ভাতা দেওয়ার। কে বলছে বন্ধ করার। আমাদের ভাতার প্রয়োজন নেই। আমরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। এতো বছর পরে যদি তালিকা করতে হয়, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের সহায়তা নিয়ে কমিটির উদ্যোগ নেওয়া হোক। না হয় আবার ভুয়া, রাজাকার, জামায়াতের লোকজন অন্তর্ভুক্ত হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের ইউনিট কমান্ডার স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করা প্রয়াত রাষ্ট্রপতির জিয়াউর রহমান নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে আমরা জিয়াউর রহমানকে সম্মান করি। ভবিষ্যতেও করব। তাই বলে স্বাধীনতা ঘোষক বলতে পারি না।’
এ সময় তিনি জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নামে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে পুলিশের ভূমিকা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা নিশ্চিতে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার খোলার কথা জানান সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। এতে ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।