তাদের কাছে স্বাধীনতা মানে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া

ঢাকা, জাতীয়

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 09:06:52

মহান স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮ বছর পার করলো বাংলাদেশ। নানা আয়োজনে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষ পালন করছে স্বাধীনতা দিবস। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের।

দেশের মানুষ যখন ব্যস্ত স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে, তখন কিছু মানুষ ছুটছেন তাদের নিত্যদিনের কাজে, জীবন সংগ্রামের চাকা সচল রাখতে। স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে প্রায় সব শ্রেণী পেশার মানুষ সরকারি ছুটি ভোগ করছেন; কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা একদিনও যদি কাজ না করেন তাহলে পুরো পরিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।

রাজধানীসহ দেশের সর্বত্রই নিত্যদিনের মত কাজে নেমেছেন দরিদ্র এসব মানুষ। রাত হলেই রেলষ্টেশন, বাসস্ট্যান্ডসহ রাস্তা-ঘাটে দেখা মেলে তাদের। এদের অনেকেরই নির্দিষ্ট বাসস্থান বা মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। দেশের দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশের মধ্যে বস্তি ও রাস্তাঘাটে বাস করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

যে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, আজ তার ৪৮ বছর পরও এসব মানুষের কাছে স্বাধীনতা মানে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। ঝড়, বৃষ্টি ও তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামের চাকা সচল রাখাই যেন তাদের কাছে স্বাধীনতা। এক দিন কাজ না করলে বাসার চুলাটাও জ্বলে না। সন্তান নিয়ে থাকতে হয় অনাহারে।

রাজবাড়ীর কালুখালী থানার রতনদীয়া ইউনিয়নের রাজ্জাক শেখ। রিকশাচালক, রাজধানীর চানখারপুল এলাকার একটি মেসে থাকেন। পরিবারের সবাই গ্রামে থাকেন। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, পেটে ভাত দেওয়ার জন্য কাজে বের হয়েছি। কাজ না করলে চলব কীভাবে। মেসের প্রতিদিন ১২০ টাকা আর রিকশা ভাড়া দিতে হয় ১২০ টাকা, মোট ২৪০ টাকা আয় করার পর যা থাকবে তাই বাড়ি পাঠাতে পারব। বাড়িতে টাকা না পাঠালে ওরা খাবে কী?

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মো. হাবিব, প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শশা ও মুড়ি বিক্রি করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে এই পেশায় তিনি। প্রতিদিন আয় হয় চার থেকে ৫০০ টাকা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/26/1553598993684.jpg

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুরে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, চার মেয়ে দুই ছেলেসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা আটজন। বড় দুই ছেলে দোকানে কাজ করেন। মেয়ে চারটার মধ্যে একটিকে বিয়ে দিয়েছেন। আরেকটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। মেজ মেয়ে মেয়ে প্রতিবন্ধী, আর ছোট মেয়েটার পাঁচ বছর। সবাইকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে থাকেন।

স্বাধীনতা বলতে তিনি কী বোঝেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যেভাবেই সময় কাটাই, যাই করি; আমি ব্যবসা করি, এটাই আমার কাছে স্বাধীনতা। আমার পরিবার নিয়ে চলছি, একটু কষ্ট হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য নাই, খুবই কষ্ট করছি। যা উপার্জন করি সেটা দিয়ে চলে যায়, আবার কোনো কোনো মাসে ঋণ করতে হয়।

আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে মানুষের স্বাবলম্বী হওয়া, আপনি কি সেটা পেয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, না, আমি পারি নাই। আমার পেছনে কোনো লোক নাই, আমারে সাহায্য করার কেউ ছিল না, আমার ভাগ্যে নাই, হয়তো এই জন্যই পারি নাই।

আপনার মেয়ে প্রতিবন্ধী, সরকারের পক্ষ থেকে কখনো কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়েছেন? তিনি জানান, না, কোনো সুযোগ-সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে পাইনি।

আজকে তো বিশেষ একটা দিন, আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। আজকের দিনে আপনি কাজে বের হয়েছেন, বের না হলে কি চলতই না? পেটের ক্ষুধায় বের হতে হয়েছে। আমি যদি আজকে কাজে না বাহির হই, আমার পোলাপান কালকে কী খাবে? কে দেবে? আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটার প্রতিদিন ১০০ টাকার ওষুধ লাগে। এটা তো সরকার আমারে দেবে না, কেউই দেবে না। আমারটা আমাকেই জোগাড় করতে হবে। কাজে বের না হলে আমার পরিবার না খেয়ে থাকত।

স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন? তিনি বলেন, আমার মতো নিরীহ লোক স্বাধীনতা কেমনে ভোগ করবে! পারছি না, যেমন আজকে আমার টাকা থাকলে আমি একটা বড় ব্যবসা করতে পারতাম। টাকা নাই, একটা ক্ষুদ্র ব্যবসা করি। আজকে কাজে না বের হলে আমার পরিবার না খেয়ে থাকবে। আমার চালান কম, আমাকে কেউ সাহায্য করে না।

অভাব অনটনে থাকলেও তার চাওয়া, দেশের মানুষ সবাই ভালো থাকুক, আমিও ভালো থাকি, দেশের মানুষ ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো। দেশ ভালোমতো চলুক, কোনো ঝামেলা না হোক।

ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে থাকেন শরীয়তপুরের আকতার হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব ও এর আশেপাশে বোতলের পানি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমি সাত বছর ধরে এই এলাকায় পানি বিক্রি করি। আজও করছি, পেটের দায়ে বাহির হয়েছি, কাজ না করলে খাব কী? একদিন কাজ বন্ধ থাকলে খাওয়া বন্ধ থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর