প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:50:13

আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুজব নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি রাখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর প্রশ্নফাঁস রোধে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে গতানুগতিক কাগজের খামের পরিবর্তে অধিকতর নিরাপত্তা বিশিষ্ট অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল খাম ব্যবহার করা হবে।

সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত সোমবারের (২৫ মার্চ) ওই বৈঠকে, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গুজব নিয়ন্ত্রণ ও প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পরীক্ষার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানোর বিষয়টিও উঠে আসে। এবারের পরীক্ষায় এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এছাড়া প্রশ্নফাঁস রোধে ট্রেজারিতে রক্ষিত প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর তিনদিন পূর্বে দিনভিত্তিক ও সেটভিত্তিক সর্টিং করে সিকিউরিটি খামে সংরক্ষণ করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রশ্নফাঁস রোধে আমরা সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে গতানুগতিক কাগজের খামের পরিবর্তে অধিকতর নিরাপত্তা বিশিষ্ট অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল খাম ব্যবহার করা হবে। যেমনটি আমরা এবার এসএসসি পরীক্ষায়ও ব্যবহার করেছি। প্রশ্নপত্র বহনকারী কেউ ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। পুলিশের প্রহরায় কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র যাবে। পরীক্ষার সময় কেউ প্রশ্নফাঁস বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আইশৃঙ্খলাবাহিনী সার্বক্ষণিক নজর রাখবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে- ট্রেজারিতে রক্ষিত প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর তিন দিন পূর্বে দিনভিত্তিক ও সেটভিত্তিক সর্টিং করে সিকিউরিটি খামে সংরক্ষণ করা। জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলাস্থ থানার লকারে প্রশ্নপত্রের ট্রাংক সংরক্ষণ করতে হবে। ট্রেজারি/থানা হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে। তিনি ট্রেজারি/থানা হেফাজত হতে কেন্দ্রসচিবসহ প্রশ্ন বের করে পুলিশ প্রহরায় সকল সেটের প্রশ্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট পূর্বে প্রশ্নের সেট কোড ঘোষণা করা হবে, সে অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি মোতাবেক খুলতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্নপত্র পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রেজারি/থানা থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী বেশি সময় আগে প্রশ্ন বিতরণ না করে প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নপত্র বিতরণ করতে হবে।

এছাড়া, প্রশ্নপত্র ট্রেজারি/থানা থেকে গ্রহণ, কেন্দ্রে প্রেরণ এবং পরীক্ষার কক্ষে বিতরণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলি ম্যানুয়ালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রশ্নপত্র গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ ম্যানুয়াল অবশ্যই সাথে রাখবেন এবং ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করবেন। পরীক্ষা চলাকালীন ও এর আগে পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্র ছাপানোর সাথে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।

পরীক্ষায় কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষক কোনোভাবে বেআইনি কোনো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হবে। দোষী শিক্ষক ও কর্মচারীগণ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তার এমপিও স্থগিত করে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য গভর্নিং বডিকে জানাবে প্রশাসন। গভর্নিং বডি দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে কমিটি বাতিল করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা একাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ নজরদারী জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোন মোবাইল নম্বরে একাধিকার একই অঙ্কের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে স্ব স্ব বোর্ড চেয়ারম্যানগণ সভা করেছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণে বোর্ড কর্তৃক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর ভেন্যু কেন্দ্রের জন্য প্রশ্নপত্রের আলাদা প্যাকেট ও ট্রাংক তৈরি করা হয়েছে যা ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রের ন্যায় সরাসরি ভেন্যুতে পাঠানো হবে। এছাড়াও নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন ডিজিটের রোল নম্বর প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১ এপ্রিল। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১১ মে। এবার পরীক্ষায় দেশের ৯ হাজার ৮১টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে মোট অংশ নিচ্ছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৬ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর