আ,লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পায়: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 00:20:56

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পায়, দেশের মানুষ সেবা পায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এ দেশের মানুষ সত্যিকারভাবে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। আর গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি র্অজনের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে।’

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করার অভিযোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগকে শেষ করবার জন্য আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শিকল বাংলার মাটিতে জনগণের সাথে এমনভাবে প্রোথিত যে, এটাকে কখনো শেষ করতে পারেনি। বরং আজকে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, যে দল জনগণের কথা বলে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গড়ে ওঠে সেই দলই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল সৃষ্টি হয় তাদের গোড়ায় কোনো মাটি থাকে না। ক্ষমতা ছাড়া তাদের কোনো অস্তিত্বই থাকে না।’

পঁচাত্তরে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সেসময় ঘটনাচক্রে দুই বোনের বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছয়টা বছর দেশে আসতে পারিনি, দেশে আসতে দেওয়া হয়নি আমাদের। কারণ, পঁচাত্তরের পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল শুরু হয়। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, হত্যা, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল। আমাদের সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার অফিসার, মুক্তিযুদ্ধ অফিসার তো কেউই নাই, এছাড়া কর্মরত হাজার হাজর অফিসার সবাইকেই প্রায় মেরে ফেলে। হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে জানতই না, ছুটিতে ছিল, কিন্তু তাদেরকেও হত্যা করা হয়। আর প্রতিরাতে ছিল কারফিউ। কারও স্বাধীনভাবে চলার অধিকার ছিল না। এই কারফিউ কিন্তু বহুবছর চলেছে। পঁচাত্তরের পর দশটা বছর খালি কারফিউ দিয়েই দেশটা চালানো হয়েছে। মানুষের স্বাধীনভাবে চলার পথ বন্ধ ছিল। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। একটা পর্যায়ে কতগুলো দল করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না, কথা বলার সুযোগ ছিল না, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এভাবে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।’

সে সময়ের ‘অবৈধ সরকারগুলোর’ সৃষ্ট একশ্রেণির ‘চাটুকার’ দলের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্যটা হল যখন দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল তখন অনেকেরই ভাল লাগেনি, যখন মার্শাল ল আসল, যখন কথায় কথায় ডান্ডার বাড়ি খেত তখন হুজুর হুজুর ডেকে খুবই যা কিছু করছে বেশ বেশ, এই বলে তোষামদি চাটুকারের দল সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই চাটুকারের দলই মিলিটারি ডিকটেটরদের পদলেহন করত। আর তাদের আমলটাকেই তারা খুব ভালভাবে দেখে। কারণ তখন যারা স্বাধীনতা বিরোধী তারাই ক্ষমতায়। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকে গণতন্ত্র রক্ষার নামে এদের সাথে হাতও মেলায়।
মার্শাল ল অর্ডিনেন্স দিয়ে যারা দেশ চালায়, প্রতিরাতে যেখানে কারফিউ থাকে, যতই রাজনৈতিক দল করতে দিক না কেন সে দেশে আবার গণতন্ত্র কীভাবে থাকে? আর গণতান্ত্রিক ধারাটা বা চলে কীভাবে সেটাই হচ্ছে আমার প্রশ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম ওইদিন বিএনপির অর্থমন্ত্রী বলেছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাল না। তাহলে বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ভিক্ষা করা যাবে না। এইছিল তাদের মানসিকতা। কারণ তারা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি তারা আনবে কেন? ভিখারি জাতি হিসেবে থাকুক সেটাই তারা চেয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সময়কার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দশ বছরে আজকে বাংলোদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে আমরা যখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছি, সমুদ্রসীমার সমস্যা সমাধান করেছি, আমাদের স্থলসীমনা চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি, এর সবকাজের ভিত্তি কিন্তু আমাদের জাতির পিতা ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এমনকি এখন আমাদের নেভীর সাবমেরিনও আছে। অর্থাৎ মহাকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত আমাদের বিচরণ আমরা করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। যারা এর আগে ক্ষমতায় ছিল তারা করে নাই, করতে চায়ও নাই। বাংলাদেশ মর্যাদাকর আসনে অধিষ্ঠিত হোক এটাও তারা চায় না। ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে যে হানাদার বাহিনীকে আমরা পরাজিত করেছিলাম, তাদেরই পদলেহন করেছে। এটাই তারা পেরেছে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলকু সেটা চায়নি।’

এ সময় জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে সংগঠনকে শক্তিশালী ও উন্নত করার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমত উল্লাহ, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন, এস এম কামাল হোসেন, অধ্যাপক মেরিনা জাহান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর