নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চাইলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ।
তিনি বলেছেন, ‘মানবিক এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রেখে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের স্বাধীনতার জন্য প্রত্যাবাসন চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’র মেজবান হলে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘শান্তি ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেভ অ্যান্ড সার্ভিস ফাউন্ডশন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা শুরুর সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যত কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনি। সবাই এ সমস্যা সমাধানে পিছপা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা এবং সাহসিকতায় দেখভালের দায়িত্ব নেন। স্থান, ভরণপোষণের পাশাপাশি তাদের ফিরিয়ে নিতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখছেন। আমরা আশা করব রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধানে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ নিরসন, ধর্মীয় বিদ্বেষ, উস্কানি, সমাজে সকল ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গুরু এবং জনপ্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। কিন্তু অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে রোহিঙ্গা সমস্যা ও সমাধানের বিষয়টি স্থান পায়।
তারা জানান, অত্যাধিক রোহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে গিয়ে কক্সবাজারের পরিবেশ ক্রমেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা কক্সবাজার থেকে অন্যত্র চলে না গেলে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানের ক্ষতি হবে।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে চট্টগ্রামের মানুষকে ভৌগলিক এবং সামাজিকভাবে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। সরকারও এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখছেন। এ সমস্যাগুলো আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। তারা যেনো কোনোভাবে অন্য কোনো অপরাধ জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। কিছুটা ত্যাগ স্বীকার জন্য আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড ইউনাইটেড নেশন স্পেশালিস্ট অ্যাডভাইজার অন প্রেভেন্টি জেনোসাইডের প্রতিনিধি অ্যাডমা ডিয়িং রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে রোহিঙ্গাদের অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশর সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার। এত জনবহুল লোকজনকে আশ্রয় এবং ভরণপোষণ দিয়ে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে। মিয়ানমার অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, বিশ্বের অন্য সম্প্রদায়েরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অ্যাজান্ডা আকারে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছে। এর সমাধানের জন্য সামনেও আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ফটিকছড়ির স্থানীয় সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ইউএনডিপির প্রতিনিধি রবার্ট স্টোটিলিম্যান, চট্টগ্রাম এডিসি (শিক্ষা) আবু হাসান সিদ্দিক, কাউন্টার টেরিরিজম (এএসপি) শহিদুল্লাহ।