তীর-ধুনক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিকামী জনগণ

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 13:26:12

২৮ মার্চ, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী ওরাও, সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণ ঢোল বাজিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন নিসবেতগঞ্জের ঘাঘট নদীর পাড়ে। উদ্দেশ্য ছিল রংপুর  ক্যান্টনমেন্ট দখল করা। দেশপ্রেমে উন্মত্ত বাঙালি জনগণ সেসময় তীর-ধনুক, দা-বল্লম ও লাঠি-সোটা নিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

জানা গেছে, ওইদিন ক্যান্টনমেন্টের চারশ গজের মধ্যে প্রবেশ করলে মুক্তিকামী বাঙালির ওপর গুলি করতে থাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। মুহুর্তেই পাখির মতো লুটিয়ে পড়েন শত শত প্রতিবাদী সাহসী প্রাণ। পরে মৃত ও অর্ধমৃত প্রায় পাঁচ শতাধিক মুক্তিকামী জনগণকে নিসবেতগঞ্জ এলাকায় পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে হয়।

আরও জানা গেছে, ৪৮ বছর আগে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎস্বর্গকারী বীর বাঙালির সেই আত্মত্যাগ আর সাহসিকতা আজও বিরল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই আক্রমণ নিরস্ত্র মানুষের জোটবদ্ধ লড়াইয়ের এক ঐতিহাসিক উদাহরণ। তাই আজকের এই দিনটি রংপুরের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচয় বহন করে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রংপুরে দুই দিন আগেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ২৪ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনসহ তিন জওয়ানকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেন রংপুরের মানুষ। এঘটনার পর পাকিস্তানী বাহিনী জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। আর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে সিরিজ হত্যা শুরু হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। একই সাথে ৩২ জনকে বেঁধে লাহিড়িরহাটের কাছে একটি মাঠে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মানুষ আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

এক পর্যায়ে অবাঙালি সৈন্যদের বন্দী করে ক্যান্টনমেন্ট দখলের সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিকামী বাঙালি। হাজার হাজার মানুষ তীর-ধনুক-বল্লম, দা-কুড়াল আর বাঁশের লাঠি হাতে ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘাঘট নদীর তীরে জমায়েত হতে থাকেন। বিশেষ করে ওরাও, সাঁওতাল তীরন্দাজ বাহিনী কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন সবার মুখে ছিল গগনবিদারী স্লোগান ‘এসো ভাই অস্ত্র ধর, ক্যান্টনমেন্ট দখল কর।’

সেদিন হঠাৎ ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাক বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে মারা যান কয়েকশ’ মানুষ। ঐতিহাসিক সেই ২৮ মার্চের কথা আজও স্মরণ করেন রংপুরের মানুষ। প্রতি বছর এই দিনে পালন করা হয় ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস।

আজও রংপুরের মানুষ আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘ও বাহে, কি কান্ডটায় না ঘটছিল বাহে, বাউংকা-লাঠি, বল্লম-কোঁচা আর তীর ধনুক ধরি হামরা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কইবার গেছিনু, মিলিটারির ঘরের মাইরবার, জয় বাংলা স্বাধীন কইরবার।’

ঘটনাবহুল মুক্তিযুদ্ধের এই দিনটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে রংপুর জেলা প্রসাশন, আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে ক্যান্টনমেন্ট চত্ত্বর সংলগ্ন ‘রক্ত গৌরব’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি পালন শুরু হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর