ভবন নির্মাণে নিয়ম মানেনি রূপায়ণ, চেয়ারম্যানকে খুঁজছে পুলিশ

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 09:37:55

রাজধানীর বনানীতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে খুঁজছে পুলিশ। এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী মামলার অন্যতম আসামি রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান।

নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার আশায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা উপেক্ষা করে ভবনটি তৈরি ও বিক্রয় করায় মুকুলকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, কাশেম ড্রাইসেল লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী তাজভীর উল ইসলাম সহ  অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে।

জানা যায়, এফআর টাওয়ারটি যে স্থানে নির্মিত সেই জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। আর এ জমির ওপর ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা নির্মাণ করা ডেভেলপার কোম্পানি রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন লিয়াকত আলী খান মুকুল। ভবনটির অনুমোদনহীন পাঁচটি তলার মালিক বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য কাশেম ড্রাইসেল লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী তাজভীর উল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ২৫ জন এবং আহত শতাধিক। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ভবনটির অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা নির্মাণের বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকলে ও নিয়শ মেনে ভবনটি নির্মিত হলে অগ্নিকাণ্ড এতো ভয়াবহ হতো না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে গত শনিবার (৩০ মার্চ) বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এই মামলা রোববার (৩১ মার্চ) ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

এই ঘটনায় শনিবার (৩০ মার্চ) এস এম এইচ আই ফারুক ও তাজভিরুল ইসলামকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করলেও গ্রেফতার করা যায়নি রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ওরফে মুকুলকে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গ্রেফতার এড়াতে লিয়াকত আলী খান ওরফে মুকুল বিদেশে পলাতক রয়েছেন।

এই বিষয়ে ডিবির (উত্তর) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহজাহান সাজু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এই মামলার অন্যতম আসামি রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী আমরা ধারনা করছি, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন গ্রেফতারের ভয়ে।’

অন্যদিকে ডিবি সূত্রে জানা গেছে, মামলা হওয়ার পর ডিবি ও থানা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে এই ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটি নির্মাণের সময় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ দায়িত্বে বড় ধরণের গাফিলতি করেছেন। এছাড়া বিল্ডিং নির্মাণের নিয়ম পালন করেনি রূপায়ণ গ্রুপ।

ডিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, এখনো এফআর টাওয়ারের জমির রেজিস্ট্রেশন ফ্ল্যাট মালিকদের বুঝিয়ে দেয়নি রূপায়ণ গ্রুপ। অন্যদিকে টাওয়ারের ১০টি ফ্ল্যাটের মালিকানা এখনো রূপায়ণ গ্রুপের হাতেই।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান আব্দুল বাতেন বলেন, ‘একটি বিল্ডিংকে ব্যবহারের উপযোগী করে ডেভেলপার হস্তান্তর করেন। কিন্তু এফআর টাওয়ারের ক্ষেত্রে এসব কোনো নিয়মই মানা হয়নি। বিল্ডিং এ কোনো ধরণের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। এতে স্পষ্টত রূপায়ণ গ্রুপের গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলা লক্ষ করা গেছে। তারা অধিক টাকা লাভ করার আশায় এই দায়িত্বহীন কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এফআর টাওয়ারের ক্ষেত্রে আরও অনিয়ম করেছে রূপায়ণ। ফ্ল্যাট মালিকদের রূপায়ণ জমি রেজিস্ট্রেশন করে দেয় নাই। কাগজেপত্রে রূপায়ণই এখনো মালিক রয়ে গেছে। সেই জন্যই রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানকে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করেছি। তাকে খোঁজা হচ্ছে, তিনি পলাতক রয়েছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর