দুর্বল ধারায় মামলা, বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন রূপায়ণের লিয়াকত

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:05:08

রাজধানীর বনানীতে ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

তবে মামলাটির অপর আসামি, ভবনটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল এখনো গ্রেফতার হননি। পুলিশের কাছে তথ্য আছে, গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে গেছেন এ ব্যবসায়ী।

নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার আশায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা উপেক্ষা করে ভবনটি তৈরি ও বিক্রয় করায় লিয়াকত আলী খান মুকুলকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, কাশেম ড্রাইসেল লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী তাসভির উল ইসলাম।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয় ২৬ জন এবং আহত হয় শতাধিক। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ভবনটির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা নির্মাণের বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলে ও নিয়ম মেনে ভবনটি নির্মিত হলে অগ্নিকাণ্ড এতো ভয়াবহ হতো না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে শনিবার (৩০ মার্চ) বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এই মামলা রোববার (৩১ মার্চ) ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী, যে ধারাগুলোতে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের কারাদণ্ড। অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মৃত্যুকে প্রশাসন থেকে বার বার হত্যা বলা হলেও, মামলার ধারা সেটা বলছে না।

দণ্ডবিধি অনুযায়ী ৪৩৬ ধারায় বলা আছে, গৃহ প্রভৃতি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আগুন বা বিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে ক্ষতি সাধন করা। যার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড পাশাপাশি অর্থদণ্ড।

মামলার অন্য ধারা ৩০৪ ‘ক’ দণ্ডবিধিতে বলা হয়েছে, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলায় মৃত্যু ঘটলে, এর সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তাররপরও ধারাটি দূর্বল কেননা এটি জামিনযোগ্য।

অপরদিকে ৪২৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ক্ষতিসাধন এবং ৫০ টাকা বা ততোধিক মূল্যের জিনিস নষ্ট করার অভিযোগ থাকলে, ধারাটি জামিন অযোগ্য হলেও দুই বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এর সর্বোচ্চ শাস্তি। সাঙ্গে থাকতে পারে অর্থদণ্ডও।

মামলার আরেকটি ধারা ১০৯ সর্ম্পকে দণ্ডবিধিতে আছে, কোনো অপরাধের প্ররোচনা দেওয়া বা সহায়তা দেওয়া। তবে এটা যদি মীমাংসাযোগ্য হয়, সে ক্ষেত্রে শাস্তির জন্য কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই।

মামলার ধারাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকোর্টের আইনজীবী মাসুদ রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগুনে পুড়ে ২৬ জনের মৃত্যুকে যদি হত্যা বলা হয়। তাহলে এই ধারাগুলোর সঙ্গে কোনো মিল নেই। ঘটনার ব্যাপকতা অনুযায়ী ধারাগুলো ঠিক হয়নি। যার একটি জামিনযোগ্য, অন্যটি শাস্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বিধানই নেই।’

এদিকে মামলার প্রথম ও তৃতীয় আসামিকে গ্রেফতার করলেও এখনো মামলার দ্বিতীয় আসামি রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরের দিন শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালেই দেশ ত্যাগ করেছেন লিয়াকত।

তার অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়াতে রয়েছেন তিনি।

বিদেশে পাড়ি দিয়ে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মামলা থেকে বেঁচে গেলেন কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান আব্দুল বাতেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তে অপরাধ অনুযায়ী সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান পলাতক রয়েছেন। তবে সে যেখানেই থাকেন না কেন, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

অন্যদিকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভবনটির ভূমির মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ণ গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর