চলতি মাসেই পিএসসি সংশোধন

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 11:55:30

চলতি মাসের মধ্যেই মডেল পিএসসি (উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি) খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত করতে চায় জ্বালানি বিভাগ। এতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ বাড়িয়ে আকর্ষণীয় করার কথা বলেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।

মিয়ানমার ও ভারতের পিএসসির দর যাচাই করে প্রতিযোগিতামূলক করার ইঙ্গিত দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার জ্বালানি বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, মায়ানমার ও ভারতের তুলনায় আমাদের পিএসসিতে গ্যাসের দর কম রয়েছে। এতে করে দরপত্র আহ্বান করার হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। সে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া আরও কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় করা যায়, তার জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশের গ্যাস ব্লকগুলো বঙ্গোপসাগরের একই অঞ্চলে অবস্থিত। মায়ানমারের তুলনায় অনেক কম দর থাকায় আগ্রহী হচ্ছে না বিদেশি কোম্পানিগুলো। তাই পিএসসি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খসড়া পিএসসি অনুমোদন হলে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে ভেটিং সাপেক্ষ অনুমোদন করা হবে। এক মাসের মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত এবং দেড় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার জন্য জ্বালানি বিভাগ নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে জানান তিনি।

মডেল পিএসসি ২০১২ অনুসারে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। তখন প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দর ধরা হয়েছিলো ৪.১৬ ডলার। আর মায়ানমারের গ্যাসের দর রয়েছে ৭ ডলার। যে কারণে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হচ্ছে না, এমন বক্তব্য হরহামেশাই দিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা।

কিন্তু পেট্রোবাংলার ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না অনেকেই। পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক (মাইনিং) মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ালেই বিদেশি কোম্পানি হুমড়ি খেয়ে পড়বে বলে আমি মনে করি না। সবচেয়ে বেশি জরুরি যেটা তা হচ্ছে তথ্য উন্মুক্ত করা। আমাদের সাগরে কি আছে কি নেই, এটা না জানলে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হবে কেন? আমাদের কাছে যে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে সেগুলো পাবলিক করতে হবে অথবা স্বল্প দরে দিতে হবে।

যখন বিদেশি কোম্পানি বুঝতে পারবে আমাদের সাগরে অনেক তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখনই বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। না হলে দর বাড়ালেও অথৈ সাগরে সহজে কেউ টাকা ঢালতে চাইবে না। আমাদের কাছে সার্ভের যে সব তথ্য রয়েছে এগুলো বাক্সবন্দী করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে খুব ভালো ফল পাওয়া কঠিন হবে বলে মনে করেন মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, মায়ানমার গ্যাস পুরোটাই বিক্রি করে দেয়। যে কারণে গ্যাসের দর যত বেশি হবে ততো লাভ মায়ানমারের। আর আমরা পুরো গ্যাস ব্যবহার করবো তাদের সঙ্গে আমাদের গ্যাসের দর এক করার কোনো যুক্তি আমি দেখি না। যারা বলেন, এটা আত্মঘাতীর শামিল।

শামসুল আলম বলেন, মূলত একটি চক্র গ্যাসের দেশীয় গ্যাসের দাম এমন পর‌্যায়ে নিতে চান। যাতে আমদানির সমান দাম পড়ে। আমদানিকে জাস্টিফাই করার জন্য তৌফিক ইলাহী চক্র জ্বালানি খাতের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। যাতে করে এলএনজি আমদানি অব্যহত রাখা যায়। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে বেশি দাম পড়ে, তাই বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। তেমনি জ্বালানি খাতেরও ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।

সমুদ্রসীমা নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় ২০১২ সালে আর ভারতের সঙ্গে ২০১৪ সালে। এতে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমাকে ১১টি অগভীর ও ১৫টি গভীরসহ মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে

অগভীর সমুদ্রে মাত্র ৩টি ও গভীর সমুদ্রে ১টি ব্লকে চুক্তি করেছে। অন্যদিকে পাশের ব্লক থেকে মায়ানমার নিয়মিত গ্যাস তুলে যাচ্ছে। সমুদ্র সীমা জয়ের পর একাধিক দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলে তেমন সাড়া মিলছে না। যে যুক্তি দিয়ে নতুন করে পিএসসি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থলভাগে গ্যাস দিন দিন ফুরিয়ে আসছে। সংকট মোকাবেলায় উচ্চদরে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, যথা সময়ে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান কার্যক্রম হাতে নেওয়া গেলে আজকে এই সংকট তৈরি হতো না।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেছেন, বিদ্যুতে যেভাবে সাফল্য অর্জিত হয়েছে জ্বালানি বিভাগে ততটা সম্ভব হয়নি। দক্ষ লোকবলের অভাবে জ্বালানি বিভাগ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এখন আর কারো ব্যর্থতা ছাড় দেওয়া হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর