অটিস্টিক শিশুর জন্য মায়েদের যেন দোষারোপ না করে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 01:13:27

অটিস্টিক কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুরা দেশের বোঝা নয়। যথাযথ পরিচর্যা ও ট্রেনিংয়ের মধ্যদিয়ে তাদেরকেও দেশের জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। আর অটিস্টিক শিশুদের জন্য মায়েদের ওপর যে দোষারোপ করা হয় সেটাও ঠিক নয়। বরং তাদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'একটা অটিস্টিক শিশু যখন জন্ম নেয়, অনেক সময় এর জন্য মায়ের ওপর অনেক দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এর জন্য মা-বাবা কেউ দায়ী থাকে না। আশাকরি ভবিষ্যতে কেউ আর মাকে অযথা দোষারোপ করবেন না। কারণ এটা মায়েরও কষ্ট। কারণ আল্লাহ একটা মানুষকে এভাবে তৈরি করেছে, তাকে অবহেলা করা কোন সুস্থ মানুষের কাজ না ।'

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১২ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা মানবতার কথা বলি, মানবাধিকারের কথা বলি, কিন্তু এই মানুষগুলোর প্রতি আমাদের আরও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তাই অবহেলিত জনগোষ্ঠী যেন আর অবহেলার শিকার না হয়। তারা যেন আমাদের সমাজে তাদের যোগ্য স্থান পায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ তারা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাইবোন সে কথাটা মনে করে সবার এই অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে মিলেমিশে চলবেন।'

অটিস্টিক শিশুদের জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রতিবন্ধীদের জন্য সাভারে আমরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমাদের সংসদ ভবন সংলগ্ন সাড়ে চার একর জমিতে তাদের প্রাকটিসের জন্য করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ইন্সটিটিউট করে দিয়েছি, যেখানে একটা শিশু জন্ম হওয়ার সাথে সে অটিস্টিক কী না? প্রতিবন্ধী কী না? এটা শনাক্ত করা একান্তভাবে প্রয়োজন। কী কী সিম্পটমস দেখা দিলে একটা শিশু জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী কী না সেটা যদি খুব দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাহলে তাকে পরিচর্যার মধ্যদিয়ে অনেকটা সুস্থ করে তোলা যায়। আমরা চাই এরা সুস্থ হোক, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। আমরা ইতোমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা এই ব্যবস্থাটা করে দেব, যাতে সেখান থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত লোক তৈরি হয়।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছি এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ করেছি। সেই সাথে সাথে ২০১৪ সালে আমরা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ফান্ড আমরা করে দিয়েছি। সেই ফান্ডে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ৭০ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছি। আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ প্রতিবন্ধী আছে। এই ১০ লাখ প্রতিবন্ধীকে প্রতিমাসে ৭০০ টাকা করে কিন্তু ভাতা দিচ্ছি। দৃষ্টি,শারীরিক,মানসিক প্রতিবন্ধীদের আমরা যে ভাতা দিচ্ছি আগামী বাজেটে সকলের জন্য এ ভাতার ব্যবস্থা আমার করে দেব। যেসকল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছে তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে আমরা ৭০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত ভাতা, উপবৃত্তি দিচ্ছি। যাতে তারা পড়াশুনাটা করতে পারে। আপনারা জানেন আমরা বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি, কিন্তু প্রতিবন্ধীদের উপবৃত্তিটা আমরা বিশেষ ভাবে দেই। এবং বেশি টাকা দিচ্ছি তাদের জন্য যাতে তারা তাদের পড়াশুনাটা করতে পারে।'

অটিস্টিক শিশুদের বিকাশে নিবিড় পরিচর্যার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটা শিশু অটিস্টিক, কী কী অবস্থা হলে সেটা ধরা পরবে সেটা জানা, পাশাপাশি তাদের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, কী ভাবে আচরণ করতে হবে? কীভাবে কথা বলতে হবে? কী কাজ করলে শিশুটি সুস্থতার দিকে যাবে এর উপরে একটা ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন। সেটা আমাদের দেশে খুব বেশি একটা নেই। যে কারণে আমি আমার মেয়ে সায়মাা ওয়াজেদ হোসেন আমার মেয়ে তাকে দিয়ে আমরা 'সূচনা ফাউন্ডেশন' তৈরি করেছি। সে ফাউন্ডেশনে আমি নিজেও কিছু অনুদান দিয়েছি, অন্যান্য অনেকেই সেখানে অনুদান দিয়েছে। আর আমরা আমাদের যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, এ ট্রাস্টের ওখানে তাকে একটা অফিসও করে দিয়েছি এবং সেখানে একটা জায়গাও দিয়েছি। খুব সীমিত আকারে এ ধরনের অভিভাবকদের ট্রেনিং দেওয়া, এবং কী কী ভাবে এগুলা তৈরি করতে হবে, সীমিত আকারে আমরা সে ট্রেনিং শুরু করেছি। আগামী দিনে এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা উচিত, সেটা আমরা করব।'

অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, 'আমাদের দেশে বহু ব্যবসায়ী, বহু শিল্পপতি অনেকই আছেন। আপনারা যদি একটু সহানুভূতি নিয়ে এই ছেলে মেয়েগুলিকে একটু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে তাদের জীবনটাও কিন্তু অর্থবহ হয়। এই প্রতিবন্ধীদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন, ট্রাস্ট ফান্ডে বিত্তবানরা অনুদান দিন, যাতে তাদের জীবনটা যেন আরও সুন্দর হয়।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর