অপহরণ চক্রের সদস্যরা গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন পন্থায় বড় বড় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করত। পরে নারীর মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ ও সুন্দরী আদিবাসী নারীর প্রলোভন দেখিয়ে তারা বিভিন্ন কৌশলে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. মোনায়েমুল বাশারকে সুন্দরী নারীর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব-৪ অপহৃত ওই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে উদ্ধার করে অপহরণ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ২৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকাসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারাকৃতরা হলেন- মো.আ. সালাম (৬৪), মো.আলমগীর হোসেন (১৮), মো.ফয়েজ উদ্দিন (৩২), মো.ফয়সাল (১৮), মো.আ.হালিম (৫০) ও মো.বিল্লাল হোসেন (৩৮)।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর সিও চৌধুরীর মঞ্জুরুল কবির এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘৩ এপ্রিল সুন্দরী আদিবাসী নারীর প্রলোভন দেখিয়ে ডা.মোনায়েমুল বাশারকে চক্রটির সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভাওয়াল বনের অজ্ঞাতনামা বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ও চোখ-মুখ বেঁধে আটকিয়ে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। ওই সময় ভিকটিমের পরিবারের লোকজনকে মারধরের শব্দ ও কান্নার চিৎকার শুনিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ দিলে ভিকটিমকে খুন করার হুমকি দেয় চক্রটি। এতে ভয় পেয়ে মোনায়েমুলের স্ত্রী ও শ্যালক চক্রকটিকে বিকাশে কিছু টাকা মুক্তিপণ হিসেবে পাঠায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপহরণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-৪ এর একটি দল অভিযানে নামে। পরে বিভিন্ন কলা-কৌশল অবলম্বন করে বৃহসাপতিবার ভোরে মধুপুরের ভাওয়াল বন থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণকারী চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ছয়জন অপহরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। তারা আরও জানায়, তিনটি কৌশলে মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করত। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুন্দরী নারীর প্রেমের ফাঁদ ও সুন্দরী আদিবাসী নারীর প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জিম্মি করে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে মুক্তিপণ আদায় করত। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর,নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন বাস স্টেশনে থেকে যাত্রীদের চাহিদা মতো স্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করত। পরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত।’
র্যাব-৪ সিও বলেন, ‘এই চক্রের দশজনের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছি। এখনো চক্রটির মূলহোতাসহ আরও চারজন পলাতক রয়েছে। তাদের আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’