দেশীয় চলচ্চিত্র রফতানির নামে নিম্নমানের ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি

ঢাকা, জাতীয়

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:36:32

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশীয় চলচ্চিত্র রফতানি করার নামে দেদারসে নিম্নমানের ভারতীয় ছবি আমদানি করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। দেশের বৈধ চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা এ অসাধু বাণিজ্য বন্ধ করতে জোর দাবি জানিয়ে আসছেন।

তথ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চুক্তি অনুসারে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের প্রযোজকরা যতগুলো চলচ্চিত্র রফতানি করবে, ঠিক সেই সংখ্যায় চলচ্চিত্র আমদানি করতে পারবে। কিন্তু দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র শাখার অনাপত্তিপত্র নিয়ে দেশের চলচ্চিত্র রফতানি দেখিয়ে ভারতীয় নিম্নমানের ছবি আমদানি করছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের অধীনস্থ আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রকের দফতরের অনুমতিপত্র আর রফতানি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি দরকার পড়ে।

সম্প্রতি দেশীয় দুইটি প্রযোজনা কোম্পানি- অ্যাকশনকাট এন্টারটেইনমেন্ট, ইনউইন এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স এন ইউ আহমেদ ট্রের্ডাস ৯টি দেশি চলচ্চিত্র রফতানি দেখিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করতে চাচ্ছে।

দেশীয় চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে অ্যাকশনকাট এন্টারটেইনমেন্ট-এর প্রযোজনায় ‘পাংকু জামাই’, ’বয়ফ্রেন্ড’ , ‘চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ ও ‘শাহেনশাহ’। আর মেসার্স ইন উইন এন্টারপ্রাইজ প্রযোজনায় ’জান্নাত’, ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ , ’ফিফটি ফিফটি লাভ’ ও ’দাগ হৃদয়ে’ এবং মেসার্স এন ইউ আহমেদ ট্রের্ডাস-এর চলচ্চিত্র ’ভালো থেকো’ সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র শাখা-২ থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করেছে। অভিযোগ আছে, এ প্রযোজক কোম্পানিগুলো দেশের চলচ্চিত্র রফতানির কথা বলে ভারতীয় নিম্নমানের ছবি আমদানি করবে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিষয়টি বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। পাকু জামাই , বয়ফ্রেন্ড বা চিটাগাংইয়া পোয়া কোনোভাবেই ভারতীয় বিশেষ করে কলকাতার সিনেমা হলগুলোতে কোনোভাবেই প্রদর্শিত হবে না। শুধুই কাগজে কলমে ছবি রফতানি হচ্ছে। আর সেই কাগজ দেখিয়ে কলকাতার বাজে ছবি দেশের সিনেমাহলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশি সিনেমাগুলোর সঙ্গে দেশীয় সিনেমা টক্কর দিতে ভয় পাচ্ছে। ফলে বার বার তাদেরকে মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। কলকাতার ছবিগুলো বাংলাদেশের বাজারকে মাথায় রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু যেগুলো দেশীয় তার বাজার শুধুই বাংলাদেশ। ফলে আমাদের ছবিগুলোর বাজেট থাকে কম। আর কম বাজেটের ছবিগুলো এখন আর হল মালিকরা চালাতে চায় না।’

অসম বিনিময় বাংলাদেশের সিনেমা সংস্কৃতির জন্য আশংকাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাফটা আইনে শিক্ষামূলক সিনেমা আসার কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ আসছে সুলতান-ভাইজানের মতো নিম্নমানের বাণিজ্যিক সিনেমা। এটা খারাপ। বাংলা সিনেমা বাঁচাতে হলে এমন অসম বিনিময় এখনই বন্ধ করতে হবে।’

গুলজার বলেন, ‘আমরা যে প্রযোজকরা দেশি ছবি রফতানি করতে চাই, তাদের অবশ্যই ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের অনুমতিপত্র দেখানো ব্যধতামূলক করার দাবি জানিয়ে আসছি। তথ্য মন্ত্রণালয় বা তার  চলচ্চিত্র শাখা তা শুনছে বলে মনে হয় না।’

গত বছর জুলাই মাসে তিনটি ভারতীয় ছবি সুলতান, ভাইজান এলো রে ও ফিদা মুক্তি পেয়েছিল। এই তিন ভারতীয় ছবির দাপটে  দেশের সবেধন নীলমনি হয়ে একটি দেশীয় ছবি ঈদে মফস্বলের সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল তা হলো ’পোড়ামন ২’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর