ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব উঠছে একনেকে

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 10:02:47

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি বাস্তবায়ন হলে মীরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন বৃদ্ধি এবং দেশে ব্যাকওয়ার্ড-ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ হবে। এছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তোলা যাবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৯১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।’

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ৭ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ পালন করায় প্রকল্পটি আগামী ৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সম্প্রতি সব নির্ণায়ক পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দেশে দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এ সব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ সরকার খোলা দ্বার নীতি নিয়েছে। এই নীতির আলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গত ২০১৭ সালে এ প্রকল্প বিনিয়োগ করার জন্য ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এলওসি তিন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তির আওতায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু গত ১২-১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১৪ তম বাইলেটেরাল লাইন অফ ক্রেডিট ৩ রিভিউ মিটিংয়ে প্রকল্প সাহায্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১১৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নতি করা হয়। উক্ত ঋণের সুদের হার ১% এবং ঋণের অর্থ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড ব্যতিরেখে ২০ বছরে পরিশোধযোগ্য হবে।

সূত্র আরও জানায়, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের জুনে মোট ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়, যার মধ্যে ৫৬টি সরকারি এবং অবশিষ্ট ২৩টি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ অনুযায়ী জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) চুক্তির আওতায় বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের সুযোগ রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

এজন্য ১ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বেজা কর্তৃক সরকার থেকে ১ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে প্রস্তাবিত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এছাড়া রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর অভিমুখে জনসাধারণের অভিবাসন প্রক্রিয়া কমে যাবে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ৭ মে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ, জনবলের বেতন-ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয়, একটি মাইক্রোবাস, দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ট্যাব ক্রয় এবং মুদ্রণ, বাঁধাই করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভারতীয় অর্থনৈতিক’ অঞ্চল স্থাপিত হলে প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্প-উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এছাড়া রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর অভিমুখে জীবিকার অন্বেষণে জনসাধারণের অভিবাসন প্রক্রিয়া কমে যাবে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সুষম উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর