বৈশাখের ব্যস্ততা বেড়েছে খুলনার মৃৎশিল্পীদের

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফকরেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 02:03:55

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই আবার আসছে বাংলা নববর্ষ। তাই এ দিনটিকে বরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনার মৃৎশিল্পীরা। রাতে-দিনে সমানে কাজ করছেন তারা।

সোমবার (৮ এপ্রিল) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ফরমায়েশখানা গ্রামের পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখকে সামনে রেখে প্রতিটি পালবাড়ির মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। বৈশাখী বার্তা ছড়িয়ে পড়েছেছে এ অঞ্চলে। নারী-পুরুষ সকলে মিলে হাতে হাতে বানাচ্ছেন বিভিন্ন রকমের মাটির ব্যাংক, প্রতিমা, হাড়ি, কড়াই, ফুল, পাখি, বাঘ, হরিণ, হাতি, পুতুল, মুরগি, হাঁস, বানর, মাছ, তাল, ঘোড়া, আম, জাম, কাঠালসহ নানান রঙের জিনিসপত্র। এসব মাটির ব্যাংক, শোপিস ও পুতুলগুলোর মূল কাঠামো তৈরি করা শেষ হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের রঙের আচঁড়। 

স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিঘলিয়ার সেনহাটির এ পালপাড়া এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার আদি পুরুষ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মৃৎশিল্পী বিনয় পাল, মিঠুন পাল, গোপাল পাল, নেপাল পাল, বিকাশ পাল, তাপস পাল, দুলাল পাল, নিতাই পাল, নারায়ন পাল, স্বপন পাল, সোমনাথ পাল, রনজিৎ পাল, অরুন পাল।

পালপাড়া ছাড়াও এ অঞ্চলের সেনহাটি, গোয়ালপাড়া, তালপুকুর পুরে মৃৎশিল্পীরা বৈশাখ বরণের পস্তুতির জিনিসপত্র তৈরি করছে।

পালপাড়ার কারুশিল্পী তাপস পাল। স্ত্রী অঞ্জনা পাল ও ৫ বছরের একমাত্র ছেলে অভিজিৎ পালকে নিয়ে মৃতপ্রায় এ মৃৎশিল্পটিকে টিকিয়ে আজও জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। বাপ দাদারা মাটির কাজ করতো। তাদের হাত ধরে তাপস পালও এ কাজই করেন। ছোট থেকেই এ কাজ শুরু করেছেন। মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। তাইতো তাপস পালের বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ব্যস্ততার দৃশ্য। পরিবারের একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। তাপস পাল নিজে মুরগি ও মাছের গায়ে রং দিচ্ছেন। স্ত্রী অঞ্জনা পাল মাটির তৈরি ঝুলন্ত আম আর আপেলে রং তুলির আঁকিবুঁকি করছেন। থেমে নেই পাঁচ বছরের শিশু অভিজিৎ পালও। সেও সাহায্য করছে বড়দের কাজে।

এ বিষয়ে তাপস পাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন প্লাস্টিক সিরামিক, সিনথেটিক, ধাতব, কাঁচের জন্য মাটির জিনিসপত্রের কদর নেই। তবুও পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করিনি। কিন্তু আমাদের ছেলে অভিজিৎ স্কুলে পড়ে। ও বড় হলে এ কাজ করতে চাইবেনা বলে মনে হয়।

গোপালপাড়ার বিনয় পাল মাটির তৈরি মাছের ব্যাংকে রং দিতে দিতে বার্তা২৪.কমকে বলে, ‘সারাবছর কাজের তেমন চাপ থাকে না, কিন্তু প্রতিবছর এ সময়টায় বৈশাখ মাস এলেই আমাদের একটু ব্যস্ততা বাড়ে। খুলনা ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশাখী মেলা থেকে লোক এসে আমাদের এখান থেকে মাটির জিনিস কিনে নিয়ে যায়।’

সে আরও বলে, ‘আমাদের এখানের জিনিসগুলো ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকায় নিয়ে যায় মেলার লোকেরা। পহেলা বৈশাখের জন্য আগাম বলে যায় অনেকে। বৈশাখ মাস জুড়েই বিভিন্ন মেলা থাকায় আমাদের এখানে কাজের চাপ থাকে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর