পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ আবার দারিদ্র্যসীমায়

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-26 08:58:02

চালের অস্বাভাবিক দামের কারণে দারিদ্র্য বিমোচনে অর্জিত সাফল্য নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে আসা পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার ভেতর ঠেলে দিয়ে এটা। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের ফোরাম- সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)-এর গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। গতকাল শনিবার ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সভায় এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান উপস্থাপিত গবেষণায় বলা হয়, বড় ধরনের আমদানি সত্ত্বেও দেশে চালের দাম বেড়েছে। এ কারণে দারিদ্র্যের হার দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ এই বছর পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছর হাওর এলাকা বন্যা ছাড়াও দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপর মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা দরে উঠে যায়। এছাড়াও চিকন চাল কিনতে ৭০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হয়। যার প্রভাবে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ে। ধান তোলা থেকে শুরু করে চাল বাজারে নানা পর্যন্ত নানা ধাপেই স্বল্প আয়ের মানুষের আয়ের পথ সংকুচিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নিজে চাল আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়াতে শুল্ক তুলে দিয়েছে। এতে চালের দাম কিছুটা কমলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম এখনও ৩০ শতাংশ বেশি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে দারিদ্র্যমুক্তির কাজ এগিয়ে চললেও এই হার আগের চেয়ে কমেছে। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালে বার্ষিক দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১.৮ শতাংশ, যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে ১.৭ শতাংশে নেমে আসে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে এটি আরো কমে ১.২ শতাংশে নেমে যায়। সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের স্বাভাবিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্যের হার ২০৩০ সালের মধ্যে যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও চার শতাংশে নেমে আসবে। আর জিডিপির গড় বৃদ্ধির হার আট শতাংশ হলে সামগ্রিক ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ৬.০৫ এবং ও দুই শতাংশ হবে। সানেমের গবেষকের মতে, বাংলাদেশের জন্য এখন দুইটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমত উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি দারিদ্র্যের হার হ্রাসের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করা। এটা ছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। অপরটি হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া। অপরদিকে, ব্যাংকিং খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন এই অর্থনীতিবিদ। ব্যাংক আইন সংশোধন করে একই পরিবার থেকে আরও বেশি পরিচালক রাখার সুযোগ সৃষ্টিরও বিরোধিতা করেন সেলিম রায়হান। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রপ্তানি ৬.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চামড়া শিল্পকে ‘বছরের পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা সত্ত্বেও এই খাতে দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য চামড়া খাতের রপ্তানি ২.৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর