রাসিক’র হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ২২ কোটি টাকা

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 01:05:15

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অধীনস্থ দশটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কখনোই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি। ফলে তাদের কাছে ট্যাক্স বকেয়া পড়েছে প্রায় পৌনে ৭ কোটি টাকা। এছাড়া মহানগরীর দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে।

কর খেলাপি এসব ব্যক্তিরাও সমাজের ধনী শ্রেণির বলে জানা গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ধনী শ্রেণির ব্যক্তিদের ট্যাক্স খেলাপির কারণে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বকেয়া ট্যাক্স আদায়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। ফলে ট্যাক্স বকেয়া রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সকল সেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাসিক। প্রয়োজনে বাড়ির মালামাল ক্রোক করার সিদ্ধান্তও গৃহিত হয়েছে রাসিকের সভায়।

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মমকর্তা শাহানা আখতার জাহান বৃহস্পতিবার দুপুরে বার্তা২৪.কমকে জানান, ব্যক্তি মালিকানার হিসেবে প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তি তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়নি। এছাড়া রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার ৩৭২ টাকা, শিল্পকলা একাডেমির কাছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৯ টাকা, রাইফেল ক্লাবের কাছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৫২২ টাকা, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান (বিভাগীয়) স্টেডিয়ামের কাছে ৪৮ লাখ ২০ হাজার ৪০০ টাকা, জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের কাছে ৯৮ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৮ টাকা, রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০টাকা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা, জাফর ইমাম আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্সের কাছে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৯ টাকা, টেক্সটাইল মিলসের কাছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৬ টাকা এবং সার্ভে অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কাছে ১৫ লাখ ৭ হাজার ৯২০ টাকা বকেয়া পড়েছে।

এই ১০টি প্রতিষ্ঠান কখনোই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

ছবি: বার্তা২৪

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রিভিউ কমিটির সভাপতি নিযাম উল আযীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ট্যাক্সের টাকাতেই সিটি করপোরেশন নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে সড়কের বাতি ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণে বিপুল টাকা খরচ হয়। কিন্তু ট্যাক্সের টাকা নগরবাসী পরিশোধ না করলে, এ ধরনের সেবা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা খেলাপিদের সকল নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

খেলাপি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ট্যাক্স আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আইন নিয়ে খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে পরে জেনেছি, আরডিএ তা পরিশোধ করবে। কিন্তু বকেয়ার পরিমাণ এত বেশি যে তা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তবে আমার মেয়াদে যা বকেয়া পড়েছে তা সিটি করপোরেশন নিলে পরিশোধ করা হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাফিউস শামস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়নি। দেশের অন্য জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি তারা এভাবে কর পরিশোধ করে থাকে, তাহলে আমরাও তা-ই করবে।’

এদিকে বিপুল টাকা বকেয়া পড়ায় করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সিটি করপোরেশন মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) থেকে শুরু করেছে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় পক্ষ। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। রাজশাহী নগরীতে হোল্ডিং রয়েছে ৬০হাজার ১৪৬টি। আর বছরে আদায়যোগ্য ট্যাক্সের পরিমাণ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর