কী মাদকে প্রাণ গেল রাবির সেই দুই শিক্ষার্থীর?

রাজশাহী, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 07:37:28

রাজশাহী থেকে: হঠাৎ মাদকে আসক্ত হয়েছিলেন তিন বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মোহতাসিম রাফিদ ও তুর্য রায় এবং রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) রকি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা কোনো উৎসবের দিন তাদের আড্ডা জমতো মাদক নিয়ে। অন্য দিনের মতো সেদিন শনিবারও (৬ এপ্রিল) মাদক সেবন করেন তারা। তবে সেদিন একটু বেশি উত্তেজনা চান তারা।

এর আগেও সময়ে পদ্মার চর দিয়ে অবৈধভাবে আসা মদ তারা পান করেছে। কিন্ত ঐদিন মদের সঙ্গে ইয়াবার গুড়া, যৌন উত্তেজক ওষুধ, আর ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন। মাদকের উত্তেজনাকে আরও উপভোগ করায় ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই বিকৃত মাদক সেবনেই প্রাণ গেছে মোহতাসিম ও তূর্যের। অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে রকিকে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আলাদা আলাদা সূত্রের সাথে কথা হয় বার্তা২৪.কম প্রতিনিধির। এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রকির জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নগরীর উপ ভদ্রার সাঈদ টাওয়ারের ছাত্রাবাসে ২১৪ নম্বর রুমে থাকতেন তূর্য রায়। ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাপক মোঃ ফারুক হোসেন এর মতে খুবই নম্র ভদ্র ছিলেন তূর্য। মাদক সেবন করার মতো ছেলে তাকে মনে হয়নি কখনো।

আর নগরীর মোন্নাফের মোড়ে পাশাপাশি দুটি ছাত্রাবাস এনএন ছাত্রাবাস আর সাল সাবিল ছাত্রাবাসে থাকতেন রকি ও মোহতাসিম রাফিদ।

বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমান উল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এনএন ছাত্রাবাসের ৪১২ নম্বর রুমে ঐদিন রাতে তারা মদ্যপান করেন।’

মদ্যপানের পর যখন তারা মারা যান, তখন সিআইডি, পিআইবি, ক্রাইম সিন গিয়ে ঐ শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি রুমে অভিযান চালায়। এমন সময় রকির রুমে একটি ভারতীয় মদের বোতল পায়। যেটা মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।

মদপানে অসুস্থ হয়ে মারা যান রাবির ‍দুই শিক্ষার্থী মোহতাসিম রাফিদ ও তুর্য রায়/ ছবি: সংগৃহীত

 

একাধিক গোয়েন্দা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে পরে বিস্তারিত তথ্য দেয় রকি। কম্পিউটার সাইন্সে পড়া এ শির্ক্ষাথী জানান, তারা নগরীর সাধুর মোড়ে মাদক সেবন করতেন। কিন্তু ঘটনার দিন অর্থাৎ (৬ এপ্রিল) রাতে তারা এনএন ছাত্রাবাসে তার কক্ষে মদ্যপান করেন।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোনে অর্ডার করা ঐ ভারতীয় মদের সঙ্গে সাহেব বাজারের স্টার মেডিসিন হল থেকে যৌন উত্তেজক ঔষধ মিশানো হয়। তার সঙ্গে আবার ইয়াবার গুড়ো, ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মাদকের তীব্রতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল ফুটো করে নল বসিয়ে নিজেরাই সিসা মাদক তৈরি করেন।

বোয়ালিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা আমান উল্লাহ্ বলেন, ‘মাদক সেবনের পর থেকেই তারা অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে যখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তখন ছাত্রফ্রন্টের অনুসারী এই তিন শিক্ষার্থী তাদের বড় ভাইদের বিষয়টি জানান। বাম সংগঠনের কথিত বড় ভাই সোহরাব তাদের হাসপাতালে নিতে চান। তার আগে বাসার রোডের কুহেলী ছাত্রাবাসে তাদের বিশ্রাম করতে দেন।

কুহেলী ছাত্রাবাসের পাশের বাসার মলেকা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঐ দিন গভীর রাতে অনেক মানুষের কথাবার্তা শুনেছেন তারা।’

বোয়ালীয়া থানাতে এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলার বিবরণ লেখা আছে, সংগঠনের ছোট ভাইদের সুস্থতার জন্য ডাবের পানি ও স্যালাইন পানের ব্যবস্থা করেন তোহরাব।এরপর রাত ৩টার দিকে মোহতাসিম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৪টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে ছাত্রাবাসে থাকা তুর্য রায়েরও অবস্থার অবনতি হয়। তখন তাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রোববার (৭ এপ্রিল) ভোর ৫টার দিকে মোহতাসিম রাফিদ এবং সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তুর্য রায় মারা যান।

ঘটনার প্রেক্ষিতে রাবির প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঘটনার পরবর্তী যা যা করার আমরা বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসন থেকে করেছি।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার রায়হান হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনো তৈরি হয়নি। তবে ধারনা করা গেছে। অজানা বিষক্রিয়ার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’

উল্লেখ্য, রোববার (৭ এপ্রিল) বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তারা হলেন আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহতাসিম রাফিদ। অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তুর্য রায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর