বংশালের গোলাম মোস্তফা সড়ক এখন ময়লার ভাগাড়

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-12 20:38:25

রাজধানীর বংশালে গোলাম মোস্তফা লেন এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের দু’ধারে ড্রেনের এবং মানুষের ফেলা অবর্জনার স্তূপ জমে আছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। মশার প্রকোপও তুলনামূলক বেড়েছে। এতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের দাবি, পুরান ঢাকার এ এলাকায় গত দেড়মাস ধরে ড্রেন ও সড়কের সংস্কার চলছে। এছাড়া পাঁচ দিন পর পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা নিতে আসেন। এ কারণে গোলাম মোস্তফা লেনের সড়কজুড়ে ময়লার স্তূপ জমে আছে। ফলে নাক বন্ধ করেই সকলকে হাঁটা-চলা করতে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করেও এর কোনো সমাধান হয়নি।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাম মোস্তফা লেনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কতৃক ড্রেন ও সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। তবে এদিন কাজ করতে কোনো সিটি করপোরেশনের কর্মীকে দেখা যায়নি। সড়কের দু’ধারে বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের ময়লার স্তূপ দেখা গেছে। এছাড়া এলাকাবাসীর দৈনন্দিন ফেলে দেওয়া ময়লারও স্তূপ রয়েছে। যেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। এর মধ্য দিয়েই সবাইকে নাকে হাত রেখে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

এলাকার মৌলভীবাজার সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি সৈয়দ মাসুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের মহল্লায় গত দেড় মাস যাবত সিটি করপোরেশন কাজ করছে। তাদের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। দ্রুত কাজ না করার ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ময়লার গাড়িগুলো আসতে পারছে না। তার কারণে ময়লা জমে থাকে দীর্ঘদিন আর সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।’

গোলাম মোস্তফা লেনের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কমকে, ‘আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত এই এলাকায় বাস করছি। আগে তো কখনো এমন অবস্থা দেখিনি, হঠাৎ এ অবস্থায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে এই মহল্লা। আশেপাশে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। ঘরে থাকলেও গন্ধ আসে। দুর্গন্ধের ফলে মসজিদে নামাজ পড়া মানুষের সংখ্যা কমে গেছে।’

নবী স্টোরের মালিক সাগর অভিযোগ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকমতো আসে না। চার-পাঁচ দিন পর একবার এসে ময়লা নিয়ে যায়। জমে থাকা ময়লার গন্ধে ব্যবসা করা দুরহ হয়ে পড়েছে। বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। কাস্টমার আসে না। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’

এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী আরিফা আক্তার রাফি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যখন বৃষ্টি হয় তখন ময়লা পানির সঙ্গে মিশে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিষাক্ত পোকামাকড় আমাদের ঘরে ঢুকতে থাকে তখন আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। যদিও কখনো সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করে, তাহলে দীর্ঘদিন রাস্তায় ময়লা জমিয়ে রাখে। এছাড়া বাসাবাড়ির ময়লা নিয়মিত সংগ্রহ করা হয় না। এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও কোনো সমাধান মেলেনি।’

এলাকার বাসিন্দা মহানগর যুবলীগের সহ-সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আলমগীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত আমাদের এলাকায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হতো না। কারণ, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধি পলাতক আছেন। তার নামে একাধিক মামলা থাকায় তিনি এলাকাতে আসেন না। দেরি হলেও সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে, তবে কাজের ধীর গতির কারণে আমাদের এলাকায় একটু দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।’

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ওই এলাকার জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে আমার জানা নাই। আপনার মাধ্যমে জানলাম। ময়লার কারণে ওই এলাকায় জনগণের দুর্ভোগ যেন না হয়, তার ব্যবস্থা নিব।’

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের কাছে আমি অনুরোধ করব। যেখানেই দুর্ভোগ দেখবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অভিযোগ জানালে আমরা ব্যবস্থা নিব।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর