প্রাণ ফিরছে রংপুরের নদ-নদীতে

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 20:17:21

বাস্তবায়ন হচ্ছে রংপুর জেলায় ডেল্টা প্ল্যানের তিনটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে বুড়াইল, তিস্তা, আখিরা, চিতলি, কাফ্রিখাল ও শ্যামাসুন্দরীসহ সাতটি নদ-নদী ও খালের খনন কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর সরকারি উদ্যোগে এসব নদী ও খালের খনন, তীর সংরক্ষণ, বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। এতে করে দখল-দূষণে আধমরা নদ-নদীতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে।

অথচ মাস দুয়েক আগেও সরেজমিনে পীরগাছা উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলা বুড়াইল নদীতে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। যেন সবুজের সমারোহ। বোঝার উপায় ছিল না এটি এক সময়ের খরস্রোতা বুড়াইল নদী। এখন বুড়াইলে আবাদি জমি নেই। নদীর বুকে কমছে বোরোর বিস্তৃতি। যৌবনে ভাটা পড়া এই নদীতে এখন আসতে শুরু করেছে পানি। প্রাণ ফিরছে নদীর বুকে।

তবে নিয়ম মেনে নদী খননের কাজ চলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন নদীপাড়ের মানুষজন। তারা বলছেন, সঠিক উপায়ে খনন কাজ হলে কৃষি অর্থনীতিতে নদী যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তেমনি নদী খননের উদ্দেশ্যও সফল হবে। অন্যথায় নদী খননে লাভের চেয়ে লোকসানের বোঝা ভারী হবে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া এলাকার তিস্তাপাড়ের বাবলু মিয়া, হোসেন আলী আর রহমত মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদীতে ড্রেজিং করে যা তোলা হচ্ছে, সবই তো নদীর পেটেই রাখা হচ্ছে। এতে ড্রেজিং করে কি লাভ হবে। কয়েক মাস পর নদীর মাটি-বালু নদীতেই গিয়ে আবার ভরাট হবে। তাছাড়া নদীর দু’পাড়ে যেভাবে ড্রেজিং করানোর কথা সেইভাবে কাজ তো হচ্ছে না।’

একই অভিযোগ পীরগঞ্জের করতোয়া নদীপাড়ের মানুষদেরও। তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী কোথাও খনন কাজ হয়নি। তবে যেটুকো খনন কাজ হয়েছে, তা যেন আবারও দখল-দূষণে ভেস্তে না যায়।’

এদিকে স্থানীয় নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা বলছেন, বুড়াইলের মতো প্রাণ ফিরতে শুরু করা রংপুরের নদ-নদীগুলো জীব বৈচিত্র আর পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বাড়বে অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ।

তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম হক্কানী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদী কেন্দ্রিক অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। প্রয়োজনে দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নদীগুলো বাঁচানো না গেলে এই অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী খনন কাজ সম্পন্ন হলে নদীগুলো পরিশুদ্ধ হবে। মাছের খাবার তৈরি হবে। নদীর স্বাভাবিক চেহারা ফিরে আসবে। এতে করে নদীপাড়ের মানুষরাই উপকৃত হবে।’

অন্যদিকে নকশা অনুযায়ী স্বচ্ছভাবেই খনন কাজ চলছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ পাউবোর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যারা দখল করেছিলেন, তারাই এসব অভিযোগ তুলেছেন। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি। শুধু তাই নয়, আইডব্লিউ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ট্রান্সফোর্স কর্তৃক নদী খননে তোলা মাটিগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, রংপুর জেলায় তিনটি খাল ও চারটি নদীর ১৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ খনন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়ার তিস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ ও ৪ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর