সারাদেশে প্রথম ধাপের ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম, কবিতা খানম সিলেট, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী, সাভারে হালনাগাদের কাজ উদ্বোধন করেন। এছাড়া ইসি সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ রাজশাহী, ইসির অতিরিক্ত সচিব মুখলেছুর রহমান রংপুর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক বিগ্রোডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম কুমিল্লায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজের উদ্বোধন করেন।
মঙ্গলবার থেকে ঢাকার সাত উপজেলা/ থানায় তথ্য সংগ্রহ শুরু হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, সূত্রাপুর, কোতয়ালী ও ডেমরা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) থেকে বাকিগুলোর তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে। আগামী ১৩ মে পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ১৩৫টি উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা করা হবে। নতুন তথ্য সংগ্রহের পর আগামী ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন ও ছবি তোলার কার্যক্রম। তথ্য সংগ্রহের সময় কেউ বাদ পড়লে তিনি নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়েও তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবার হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা আগামী ৩১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত হবেন। তথ্য সংগ্রহকারীদেরও ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগে আমরা চার আঙুলের ছাপ নিতাম, এবার দশ আঙ্গুলের ছাপ নেবে। এছাড়াও চোখের আইরিশ নেওয়া হবে। আমাদের প্রত্যাশা আছে যারা নতুন ভোটার হবেন, তাদের স্মার্ট কার্ড নেওয়া হবে।
২০০১ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা এবার নতুন ভোটার হিসাবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। তাদের নিবন্ধিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত ২ জানুয়ারি ২০২০ সালে। কোনো কারণে তথ্য সংগ্রহের সময় কেউ যদি বাদ পড়েন, তবে তিনি নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়েও তার তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। তথ্য সংগ্রহকারীগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ও বাদ পড়া ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। এ সময় ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তনের জন্য মৃত ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী (২০০৩ অথবা ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম) নাগরিকদেরও তথ্য নেওয়া হবে। ২০২১ ও ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি তাদের নিবন্ধিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় এক এলাকার ভোটার অন্য এলাকায় ভোটার হিসাবে স্থানান্তরিত হতে পারবেন। এছাড়াও বিগত সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছিলেন ভোটার তালিকা নিবন্ধনের জন্য তাদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একইসঙ্গে হালনাগাদ চলাকালে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবার ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কমিশন। ইসির সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৩৮১ জন ভোটার রয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গারা যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সে জন্য ৩২ উপজেলায় বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোনোভাবেই যাতে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশনাসহ কঠোর তৎপরতা রাখতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভোটার হতে যেসব কাগজপত্র লাগবে: নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন কপি অবশ্যই থাকতে হবে। কোনো কারণে তা না থাকলে নাগরিকত্বের সনদপত্র দেখাতে হবে। এটিও দেখানো সম্ভব না হলে বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে। এছাড়াও ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে এসএসসি পাসের সনদপত্র দেখাতে হবে (যদি থাকে)।
অন্যদিকে, ইউটিলিটি যেমন গ্যাসবিল, বিদ্যুৎবিল অথবা পানির বিলের ফটোকপি, বাড়ি ভাড়ার রশিদ কিংবা হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ যদি থাকে তা প্রযোজনে দেখাতে হবে। অর্থাৎ নতুন ভোটার হতে যাওয়াকে ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং তার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে।
বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, এমন যেকোনো ব্যাক্তি বিশেষ প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে বছরের যেকোনো সময় জরুরিভাবে ভোটার হতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় নারী বা পুরুষের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো হিজড়া সম্প্রদায়ের কেউ চাইলে, হিজড়া লিঙ্গ পরিচয়েও ভোটার হতে পারবেন। এর আগে হিজড়ারা নারী অথবা পুরুষ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হতেন। যেসব হিজড়া নারী অথবা পুরুষ পরিচয়ে ভোটার হয়েছেন, তারাও ইচ্ছা করলে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ফরম পূরণ করে হিজড়া পরিচয়ে নতুন করে ভোটার হতে পারবেন।
ইসি জানায়, ইতিমধ্যে অনেকে ভোটার হয়েছেন। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাননি। এমন কেউ থাকলে তাদেরকে আর নতুন করে ভোটার হবার প্রয়োজন নেই। সময় মতো তারা এনআইডি পেয়ে যাবেন। কারণ দ্বৈত ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কেউ দুইবার ভোটার হলে তার এনআইডি লক করে রাখা হয়। লক এনআইডি দিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। কারণ যে কেউ তার তথ্য যাচাই করতে গেলে সেটি লক করা দেখাবে। এ ছাড়া দ্বৈত ভোটার হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত বেশ কিছু নাগরিকের নামে ইসি মামলা করেছে।
উল্লেখ্য, এবার ভোটার তালিকায় হালনাগাদ কার্যক্রমে মোট তথ্য সংগ্রহকারী থাকবে ৫২ হাজার ৫০০ জন, সুপারভাইজার ১০ হাজার ৫০০, টেকনিক্যাল সাপোর্টে থাকবে ৬৪ জন এবং রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র থাকবে ৭৮০ পয়েন্টে। প্রতি দুই হাজার নাগরিকের বিপরীতে একজন করে তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে।