হারিয়ে যাচ্ছে রুপালীর শেষ স্মৃতিচিহ্নও

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2024-01-09 20:57:29

সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর আকন্দপাড়া গ্রামের রুপালী বেগমের শেষ স্মৃতি বলতে আছে একটি মাটির ঘর। সেটাও ধসে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে মারা যান রুপালী।

জানা গেছে, সংসার জীবনের বিচ্ছেদ বিরহ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিলেন রুপালী বেগম। তাই চার সন্তানের রুটি-রুজির যোগান দিতে ছুটে যান ঢাকায়। পরিবারের অন্য কাউকে না জানিয়ে সাভারের রানা প্লাজায় পোশাক শ্রমিকের চাকরি নেন। হাড়ভাঙা শ্রম আর ঘাম ঝড়ানো কষ্টে কোনো রকমে দিন চলছিল রুপালীর। দুই বড় মেয়ে মিলি ও মেরি অন্যের বাসায় কাজ করতো। আর ছোট দুই ছেলে রাহুল ও রুবেল থাকত মায়ের সাথে সাভার।

কিন্তু সেই মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা মেয়েদের মনে থাকলেও ছোট দুই ছেলে কিছুই স্মরণ করতে পারে না। শুধু জানে মা নেই। মায়ের সাথে তোলা কোনো ছবিও নেই। তাই ওদের কাছে এই মাটির ঘরটাই মায়ের শেষ স্মৃতি।

রুপালীর বড় ভাই দুদু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা জানতাম না রুপালী গার্মেন্টসে চাকরি করতো।দুর্ঘটনার পর জানতে পারি সাভারের রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসাবে চাকরি নেয় সে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবন ধসে মারা যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী রুপালীর চার সন্তানকে চার লাখ টাকা দেন। আর বিভিন্ন সময় বিজিএমইএ ও বেসরকারি সংস্থা থেকে আরও চার লাখ টাকা অনুদান আসে। অনুদানের টাকা দিয়ে রুপালীর বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আর বাকি টাকায় দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোনের কোনো স্মৃতিচিহ্নই নেই। সে যে ঘরটিতে থাকতো, সে ঘরটিও ভেঙে পড়েছে। মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েকে দেখানোর মতো বড় ছবিও নেই। তাই রুপালীর মাটির ঘরটাই এখন শেষ স্মৃতি।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মোট এক হাজার ১৩৫ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে রংপুরের ২৬ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হয়। এর মধ্যে বদরগঞ্জে ১৮ জন, মিঠাপুকুরে ৭ এবং রংপুর সদর উপজেলার এক জন রয়েছেন। আর আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল দুই হাজার ৪৫৮ জন। যাদের মধ্যে রংপুরের পোশাক শ্রমিক ছিল অর্ধশতাধিক। যাদের বেশিরভাগই এখনো পেটের তাগিয়ে রাজধানীতে পড়ে আছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর