মডেল পিএসসি’র খসড়া প্রস্তুত, গ্যাসের দাম ৬ ডলার!

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 09:35:01

উৎপাদন ও বন্টন চুক্তির (পিএসসি) সংশোধনীর সারসংক্ষেপ বা খসড়া প্রস্তুত করেছে জ্বালানি বিভাগ। আগামী সপ্তাহে ওই খসড়া মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হতে পারে। খসড়া প্রস্তাবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৬ ডলার। তবে ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে খরচ পড়বে প্রায় ৭ ডলার। পেট্রোবাংলা সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ৭-১০দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করার রেওয়াজ রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ দ্রুত মডেল পিএসসি সংশোধন করতে চায়। বিশেষ করে দাম বাড়িয়ে বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় সংস্থাটি।

সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানিতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, গ্যাসের দাম কম থাকায় অনেকবার দরপত্র আহ্বান করেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই মডেল পিএসসি-২০১২ সংশোধন করে গ্যাসের দাম আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। বক্তব্যে তিনি গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও একাধিকবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পিএসসি-২০০৮ প্রস্তুত করার সময় খসড়া উন্মুক্ত করা হয়। তারপর সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়। এমনকি উন্মুক্ত গণশুনানি করে চূড়ান্ত করা হয় পিএসসি। ২০১২ সালেও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এবার আরও কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে কার্যক্রম। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, এটা গোপনীয়তার বিষয় নয়, প্রকাশ্য হলে সমালোচনা কম হয়।

জানা গেছে, মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশের গ্যাস ব্লকগুলো বঙ্গোপসাগরের একই অঞ্চলে অবস্থিত। মিয়ানমারের তুলনায় অনেক কম দর থাকায় আগ্রহী হচ্ছে না বিদেশি কোম্পানিগুলো। তাই পিএসসি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে ভেটিং সাপেক্ষ অনুমোদন করা হবে। তবে যে কোম্পানিই কাজ পাক না কেন, বাপেক্সের ১০ শতাংশ শেয়ার থাকবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য বাপেক্সকে গভীর সমুদ্রে শক্তিশালী করা।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার মতে, মডেল পিএসসি-২০১২ অনুসারে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। তখন প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দর ধরা হয়েছিল ৪.১৬ ডলার। আর মিয়ানমারের গ্যাসের দর রয়েছে ৭ ডলার। যে কারণে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হচ্ছে না।

কিন্তু পেট্রোবাংলার ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না অনেকেই। পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক (মাইনিং) মকবুল ইইলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ালেই বিদেশি কোম্পানি আসবে- এটা ঠিক না। তথ্য উন্মুক্ত করাই সবচেয়ে জরুরি। আমাদের সাগরে কী আছে, কী নেই- এটা না জানলে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হবে কেনো? আমাদের কাছে যে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে সেগুলো পাবলিক করতে হবে অথবা স্বল্প দর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন বিদেশি কোম্পানি বুঝতে পারবে আমাদের সাগরে অনেক তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখনই বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। না হলে দর বাড়ালেও অথৈ সাগরে সহজে কেউ টাকা ঢালতে চাইবে না। আমাদের কাছে সার্ভের যে সব তথ্য রয়েছে এগুলো বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে খুব ভালো ফল পাওয়া কঠিন হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। আর ভারতের সাথে নিষ্পত্তি হয় ২০১৪ সালে। এতে বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমাকে ১১টি অগভীর ও ১৫টি গভীরসহ মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে অগভীর সমুদ্রে মাত্র ৩টি ও গভীর সমুদ্রে ১টি ব্লকে চুক্তি করেছে।’

এদিকে বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে মিয়ানমার নিয়মিত গ্যাস উত্তোলন করছে। সমুদ্রসীমা জয়ের পর একাধিক দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মেলেনি। ফলে নতুন করে পিএসসি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, স্থলভাগে গ্যাস দিন দিন ফুরিয়ে যাওয়ায় সংকট মোকাবিলা করতে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, যথাসময়ে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর