জনসংখ্যার অনুপাতে শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 12:11:48

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাখাতে বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা টাকার পরিমাণে কম না; কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে সেটি খুব কম। এসব বিষয় চিন্তা করে শিক্ষাখাতে আরো বাজেট বাড়াতে হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের উদ্যোগে ‘আগামী বাজেট ও শিক্ষাখাত: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংখ্যাগত উন্নয়নের সাথে শিক্ষার মান বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলনে, প্রাথমিকে শিশু ঝড়ে পড়ার হার আমরা কমিয়েছি। চেষ্টা করছি শিক্ষার মান উন্নয়ন করার। শিক্ষার মান যদি উন্নত করতে হয় এবং ঝরে পড়ার হার যদি আরও কমাতে পারি তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দের হার আরও বাড়াতে হবে।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষা বাজেটের আকার বাড়লেও, মূল বাজেটের দুই শতাংশেরও কম। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প সরকার নিজ টাকায় করছে। তবে, সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাজেটে শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আমরা পাব। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার জনবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব সরকার। এই সরকারের যতগুলো জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে, সেখানে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ কাজ করবে। আমরা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা হবে, বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে পরিমাণ আর্থিক বরাদ্দ ও বিনিয়োগ প্রদান করতে হবে, সেখানেও বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার সমানভাবে মনোযোগী।

তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু পরিবর্তন হয়। গত ১০টা বছর কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হয়েছে সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা সব শিশুদের স্কুলে আনতে চাই। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহার ছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমাদের জিডিপির অন্তত চার ভাগ শিক্ষারক্ষেত্রে থাকবে। বিশ্বের অনেক দেশ এটি চার এর ওপরে আছে। আমাদের সমপরিমাণও আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির এনএইচএনের ডিরেক্টর অ্যান্ড কনসালটেন্ড ডা. সিএম দিলোয়ার রানা, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন এমডব্লিউইআরের আহবায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন এএসএম সুজাউদ্দীন।

সেমিনারে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নতুনরা শিক্ষা বাজেট নিয়ে ভাবছে এটিই বড় পাওয়া। আমরা কাজটা শুরু করেছিলাম দীর্ঘদিন বিষয়টি বন্ধ ছিল। নতুনদের কাজে কিছু দুর্বলতা থাকবেই।

স্কুলগুলোকে মিড ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, পেটে ক্ষুধা রেখে বিদ্যা হয় না। তাই মিড ডে মিলে বিস্কুট দিলে চলবে না। তাদের পেট ভরে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষায় অবশ্যই বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। সুশিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। আজ সুশিক্ষিত মানুষের অভাবের কারণে নুসরাতের মতো মেয়েদের নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে।

ডা. দিলওয়ার রানা বলেন, শিক্ষার সাথে সাথে স্বাস্থ্যখাতেও বাজেট বাড়াতে হবে। সাথে সাথে সেই বাজেট কিভাবে ব্যয় হচ্ছে সেটিও তদারকি করতে হবে।

আসন্ন অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাজেটের আওতায় আনতে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজনের প্রস্তাব তুলে ধরেন ফারুক আহমাদ আরিফ। তিনি বলেন, ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় এবং মাধ্যমিকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন খাতে ২৫ হাজার কোটি ও অনুন্নয়ন খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। আর উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসা ও উচ্চ শিক্ষায় ৮০ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৮ হাজার কোটি ও অনুন্নয়ন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা। মাদরাসায় ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৩ হাজার ও অনুন্নয়ন খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এসব অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে যাতে ব্যবহার করা না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা ও অনুন্নয়ন খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং শুধু গবেষণা খাতে আলাদাভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে বরাদ্দ নয়।

বাজেটে আয়ের খাতসমূহ: আয়ের খাতের মধ্যে সরকারি উৎস হতে ৮০ হাজার কোটি টাকা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দিবে ৪০ হাজার কোটি টাকা ও ২০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান।

উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করে সেখানে- ১. একাডেমিক ব্যয়, ২. অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বাদ দিয়ে যে অর্থ রয়ে যাবে তা সরকারকে দিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। সরকার সেই অর্থ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি ১. প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে জমি প্রদান, ২. শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, পেনশন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ৩. কর্মকর্তা-কর্মচার্রীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন, ৪. সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিতরণ করবে ৫. শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দিবে, ৬. শতভাগ আবাসন (শিক্ষার্থী-শিক্ষক), ৭. যাতায়াত, ৮. গবেষণা, ৯. চিকিৎসা, ১০. পুষ্টিকর খাবার, ১১. বিদেশি বৃত্তিসহ শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এছাড়াও তিনি বিশেষভাবে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। যথা-

১. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনার্স ও ডিগ্রির প্রথম বর্ষে ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি তথ্য সম্বলিত সংক্ষিপ্ত বই রচনা করে অনার্স ও ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২. শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দিতে হবে, যা কর্মজীবনে গিয়ে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবে।

৩. শিল্প-কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা তাদের লাভের শতকরা ৩ শতাংশ অর্থ সরকারকে দিবে, সরকার সেসব অর্থ দিয়ে এডুকেশন ব্যাংক নামে শুধু শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যাংক হিসেবে চালু করবে।

৪. ২০৪১ সালে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে।

৫. এসব কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি করতে হবে যেখানে সদস্য থাকবে ক. শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, খ. প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি এবং গ. সরকারে প্রতিনিধি থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর