রানার বিচার হতে এতো দেরি কেন?

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 03:47:11

দেখতে দেখতে ছয় বছর পূর্ণ হলো অভিশপ্ত রানা প্লাজা ট্রাজেডির। ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবন ধসেই ঝড়ে গেছে কত শত প্রাণ। নিভে গেছে হাজারো পোশাক শ্রমিকের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার আলো। রানা প্লাজা ভবন ধসে মায়ের অকাল মৃত্যু দেখেছেন গোলাপ হোসেন। যন্ত্রণা কাতর আহাজারি আর বাঁচার আকুতি কোনটাতেই শেষ রক্ষা হয়নি তার মায়ের।

কিন্তু যার কারণে এতো মানুষের প্রাণহানি সেই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিচার হতে এতো দেরি কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটাই যেন বারবার খুঁজছিলেন গোলাপ হোসেন।

গোলাপ হোসেনের মায়ের নাম গোলাপী বেগম। বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি সরকারপাড়া গ্রামে। অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সাভারের রানা প্লাজার একটি গার্মেন্টসে পোশাক শ্রমিকের কাজ করতেন।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৬ জন পোশাক শ্রমিক। আহত হন আরও দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। ওই ঘটনায় নিহত হন গোলাপী বেগমও।

গোলাপীর অকাল মৃত্যুর পর তার অসুস্থ স্বামী আয়নাল হোসেনের শরীর আরও বেশি খারাপ হয়। বর্তমানে আয়নাল প্রায়ই চিকিৎসা নিতে পড়ে থাকেন ঢাকার কোনো না কোনো হাসপাতালে। রংমিস্ত্রি পেশার সামান্য আয়ে সংসার চালাচ্ছেন ছেলে গোলাপ হোসেন। এখন গোলাপই পুরো সংসারের ভরসা।

গোলাপীর পরিবারের মতো বদরগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত অন্য পরিবারগুলোরও একই অবস্থা। রানা প্লাজা ট্যাজেডিতে রংপুরের ২৬ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হয়। এর মধ্যে বদরগঞ্জে ১৮ জন, মিঠাপুকুরে ৭ জন এবং রংপুর সদর উপজেলার ১ জন রয়েছেন। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল অর্ধশতাধিক। যাদের বেশির ভাগই এখনো পেটের তাগিদে রাজধানীতে পড়ে আছেন।

সাংবাদিক পরিচয় জানার পরে বার্তা২৪.কমকে গোলাপ বলেন, ‘খারাপ লাগে, আমার মায়ের মতো কত মা মারা গেছে। প্রথম প্রথম সবাই আমাদের খোঁজ রাখতেন। বাড়িও আসতেন। এখন আর কেউ খোঁজখবর নেন না। কীভাবে অভাবের সংসার চলছে কেউ জানতেও চায় না। এটাই পৃথিবীর নিয়ম, এটাই বাস্তবতা।’

গোলাপ আরও বলেন, ‘অবাক লাগে, এক সঙ্গে হাজারের বেশি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। কতগুলো মানুষ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পঙ্গু হলো। যার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের জন্য এতগুলো মানুষ মারা গেল, তার বিচার করতে এতো দেরি কেন? আজব দেশ, আজব আইন! তারপরও যদি রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সঠিক বিচার হয়, তাহলে মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। অর্থ লোভী গার্মেন্টস মালিকরাও সতর্ক হবে।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বলেন, ‘ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তাদের খোঁজ খবর রাখার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর