ফাইনালের খাতা দেখা হলো না ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাবণ্যের

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:53:17

সকাল সকাল ঘুম ভাঙে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যের (২১)। ঘুম থেকে উঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার জন্য।

২০১৯ সালের স্প্রিং সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষায় নৃবিজ্ঞান কোর্সের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ক্লাসে নৃবিজ্ঞান কোর্সের খাতা দেখানোর কথা ছিল। এর মধ্যে সকালের দিকে দুয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে ফোনে কথাও হয় লাবণ্যের। 

লাবণ্যের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে নিচে নামেন লাবণ্য। ক্লাস ১২টায় হওয়ায় দ্রুত যেতে হবে বলে রাইড শেয়ার উবারের একটি মোটরসাইকেলে চড়ে রওনা হন।

লাবণ্য বাইকে চড়ার ৩০ মিনিট পর তাকে বহন করা মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয় একটি কাভার্ড ভ্যান। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান লাবন্য। বেলা ১১ টার দিকে শেরেবাংলা নগরের হৃদরোগ হাসপাতালের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিমিষেই শেষ হয়ে যায় লাবণ্যের স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যাওয়া হয়নি ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখতে।

জানা যায়, লাবণ্যের বাবা এমদাদুল হক একজন ব্যবসায়ী। লাবণ্যের ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। লাবণ্য বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলেন, তাই মা-বাবা মেয়েকে ভর্তি করান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বাবা-মার প্রত্যাশা অনুযায়ী লাবণ্যও নিয়মিত ভালো ফলাফল করে আসছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় হঠাৎ করে লাবণ্যের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে তার পরিবার।

ফাহমিদা হক লাবণ্য/ ছবি: সংগৃহীত

 

লাবণ্যের খালাত ভাই রাকিব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ছোট থেকে লাবণ্য মেধাবী ও ভালো স্বভাবের মেয়ে ছিল। লাবণ্যের এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না খালা-খালু। তারা দুই জনই মেয়ে হারানোর শোকে একবারে ভেঙে পড়েছেন।’

লাবণ্যের দুর্ঘটনার কথা শোনে সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠীরা ভিড় জমান সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে। তারা অবস্থান নিয়ে সেই উবার চালকের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে লাবণ্যের সহপাঠী কাজী তাহমিদ হোসাইন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও লাবণ্যের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল। সবাই তখনো ফাইনাল পরীক্ষার খাত দেখানোর বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই যে লাবণ্যকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলব, তা ভাবতেও পারেনি।’

লাবণ্য সবার মধ্যমণি ছিল জানিয়ে তাহমিদ বলেন, ‘লাবণ্য আমাদের ভার্সিটির আড্ডার মধ্যমণি ছিল। সে পড়ালেখায় যেমন ছিল, তেমনি সবার সঙ্গে হাসিখুশি মিশত। তার এভাবে চলে যাওয়া আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে ফেলেছে। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

এদিকে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। লাবণ্য উবারের বাইকে রাইড নিয়েছিলেন। দুর্ঘটনায় উবার চালক সুমন আহত হলেও পুলিশ যাওয়ার আগে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।

এ বিষয়ে শেরে-বাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানে আলম মুন্সি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা রাইডারকে খোঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ঠিকানা পাওয়া গেছে। তিনি আদাবরে থাকেন। আমরা তাকে ট্রেস করার চেষ্টা করছি। এছাড়া যে কাভার্ড ভ্যানটি তাকে চাপা দিয়েছে সেটিও শনাক্ত করার কাজ চলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর