‘ফণী’ আতঙ্ক বাড়ছে খুলনার উপকূলে

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 16:44:19

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ক্রমশ শক্তশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে খুলনার উপকূল জুড়ে। ঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার মানুষরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঝড় এলেই প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে এসব এলাকার বাড়িঘর, ফসল, মাছের ঘের। এখন প্রতিটি মুহূর্তই উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের সময়।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় খুলনার নদীভাঙন কবলিত এলাকা দাকোপ-কয়রা-পাইকগাছা, বাগেরহাটের উপকূলীয় অঞ্চল মংলা-শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর-আশাশুনি এলাকার প্রায় দু’লক্ষাধিক উপকূলবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলের নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী নদী কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, শিবসা ও কয়রা নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় আংটিহারা, চরামুখা, গোলখালি, কাটকাটা হরিহরপুর, শাকবাড়ীয়া, ঘাটাখালী, গাজীপাড়া, উত্তর মহেশ্বরীপুর মেখের বাড়ি, নয়ানী, উত্তর মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, দশালিয়া, মঠবাড়ী ও ৪ নং কয়রা ওয়াপদার বেড়িবাঁধের জোয়ারের পানি কানায় কানায় ভরে উঠেছে।

তবে উপকূলীয় এলাকা দাকোপ ও পাইকগাছায় ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। নদীতে পানি বাড়ার কারণে এসব উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা ভয় পাচ্ছে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার। বেড়িবাঁধ ভাঙলে পানিবন্দী হয়ে পড়বে এসব এলাকার বাসিন্দারা।

উপকূলীয় উপজেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে আর মাত্র ১-২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেলেই শতাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে ভেতরে পানি ঢুকে পড়বে।

লিংকন শেখ নামের কয়রার বাসিন্দা বার্তা২৪.কমকে জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ ঘূর্ণিঝড় ফণী ধেয়ে আসার আতঙ্কে রয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে অমাবশ্যার গোন (সময়) হওয়ায় নদীতে দেড় থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে। দক্ষিণ বেদকাশী ও কয়রা সদরের বাসিন্দারা বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগে রযেছেন।

দাকোপের বাসিন্দা উৎপল দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দাকোপে এখনো তেমন কোনো আতঙ্ক শুরু হয়নি। গ্রামের কেউ কোনো মাইকিংও শোনেনি। কিন্তু লোকমুখে ঝড়ের খবর শুনেছে সবাই। ঘূর্ণিঝড় আসছে এমন আলোচনা ও সর্তকতা রয়েছে। শুক্রবার ঝড় আসতে পারে অনেকে ধারণা করছে ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এখানে ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস নেই।’

বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা খুলনা ও সাতক্ষীরার প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিনেও টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষের। ঘূর্ণিঝড় ফণী’র কারণে নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উপকূলের মানুষ।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি এলাকার ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধের ভাঙন রোধে এখানে বালুর বস্তা, জিও ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য হানার আশঙ্কায় খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকায় ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং শুরু হয়েছে। ফণী মোকাবেলায় খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলার ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের উপজেলাগুলোতে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪৪টি মেডিকেল টিম। খুলনার ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। দাকোপে ১ হাজার ৩৬৫, কয়রায় ১ হাজার ৯৫জনসহ মোট ২ হাজার ৪৬০ জন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্য সজাগ রাখা হয়েছে। এছাড়া সেনা ও নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুযোর্গ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবেও শুকনো খাবার, টিআর চাল, নগর অর্থ ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খুলনার কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি।’

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চার দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আঘাত হানার আশঙ্কায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর