দুর্বল হয়নি ফণী, রয়েছে বাংলাদেশের সীমানায়

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 15:43:08

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ফণীর অগ্রভাগ বাংলাদেশের সীমনায় চলে এসেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি এখনও দুর্বল হয়নি। ফণী বর্তমানে মংলা বন্দরের ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে ৭নং সর্তকতা সংকেত জারি করা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল জানান, আমাদের ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৯টি জেলার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে, এই প্রচেষ্টা সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। আমাদের টার্গেট অনুযায়ী সন্ধ্যা নাগাদ ২১-২৫ লাখ লোক আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হবে।

সচিব বলেন, খুলনার প্রায় ১ লাখ, সাতক্ষীরায় ১২ হাজার, বাগেরহাটে ৪০ হাজার, পিরোজপুরে ৬ হাজার, বরগুনায় ৮০ হাজার, পটুয়াখালীতে ৩৭ হাজার ৫০০, বরিশালে ৫ হাজার, ভোলায় ৩৫ হাজার, নোয়াখালীতে ১৫ হাজার, লক্ষীপুরে ১২ হাজার, ফেনীতে ৫ হাজার, চট্টগ্রামে ২০ হাজার, কক্সবাজারে ১ হাজার, ঝালকাঠিতে ১০ হাজার, চাঁদপুরে ৫ হাজার, শরীয়তপুরে আট হাজার ও মাদারীপুরে ৪ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। ১৮০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় ভারতের ওড়িশা অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। বর্তমানে ফণী বাংলাদেশের মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। ফণীর কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এলাকার মধ্যে রয়েছে- উপকূলীয় জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ‍উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ। এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড়টি এখনো ‘শক্তিশালী’ ঘুর্ণিঝড় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করছে। এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের এলাকার সমস্ত জনসাধারণকে অতিদ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার আহ্বান করছি। সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করতে বলা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ যেন আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ না করেন। ঘুণিঝড়ের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে, তবে ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্র আসতে কিছুটা দেরি হবে। খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘলা হওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল সন্ধ্যা ৬টায় আসবে সেটা ইতোমধ্যে এসে গছে। এটা সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করবে, সারারাত চলতে থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি সমগ্র আকাশ ছেঁয়ে ফেলবে মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত। দুর্বল এখনো হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল, আঘাত করে সে দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ঝড়টি দুর্বল হয়নি। কলকাতায় এখনো ১৮০ কিলোমটিার বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলক হক বলেন, এখন গ্রামাঞ্চলেও বাড়িঘর পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। গ্রামে বহু প্রাথমিক স্কুলভবন হয়ে গেছে। সেই কারণে সব লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে না। ভালো আশ্রয়ের জন্য স্কুল, কলেজ, বাড়িঘর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘর ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজেই সবাই যে আশ্রয় কেন্দ্র চলে আসবে, তা নয়। তারপরও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান জানান, লন্ডন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। কোনোভাবেই বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর