মেয়রের নির্দেশ মানছেন না মাংস ব্যবসায়ীরা

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 17:25:00

প্রতি বছর রমজান এলেই গরুর মাংসসহ অন্যান্য মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। তবে, সেই নির্ধারিত দাম কমই মানেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

রমজান শুরু হওয়ার আগে ৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে গত বছরের চেয়ে ৭৫ টাকা বাড়িয়ে দেশি গরুর মাংসের কেজি ৫২৫ টাকা করে দিয়েছেন। আর আমদানি করা ভারতীয় গরুর মাংস ৫০০ টাকা, মহিষের মাংস ৪৮০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার (৮ মে) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, খেয়াল খুশি মতো দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা। অধিকাংশ বাজারে নেই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্য তালিকা।

ক্রেতাদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, সিটি করপোরেশনের সঠিক তদারকির অভাবে মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি দাম নিচ্ছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তাদের যুক্তি, বাড়তি দামে গরু কিনতে হচ্ছে, তাই মাংসের দামও বেশি।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মো. পারভেজ বাড়তি দাম প্রসঙ্গে বলেন, আমরা দেখেছি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে কোনো তালিকা আসেনি। তালিকা এলে তখন দেখবো।

তার দোকানে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম রাখা হচ্ছে ৫৫০ টাকা। বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ‍শুধু আমরা যারা দোকানে বসি, তাদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু যারা রাস্তায় ভাগা দিয়ে মাংস বিক্রি করেন, তাদের কিছু বলতে পারে না। সেসব জায়গায় ৬০০ টাকার কমে কোনো মাংসই নাই।

পাশেই খাসির মাংস বিক্রি করছেন ওয়াজির আলম। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই সিটি করপোরেশনের বেধে দেওয়া দামে বিক্রি করছি। তবে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে চালান থাকে না।

রাজধানীর খিলগাঁও কাঁচাবাজারে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকে মাংস কেনার পর ইয়াসির আরাফাত জানান, এখানে কোনো দোকানেই ৬০০ টাকার নিচে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। নেই সিটি করপোরেশনের মূল্য তালিকাও।

তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের দাম নির্ধারণ আসলে ‘আই ওয়াশ’। রাজধানীর কোনো বাজারেই ৫৫০ টাকার নিচে গরুর মাংস পাবেন না। এটা দেখবে কে?
 

বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা/ছবি: শাহজাহান মোল্লা

 

রাজধানীর মধ্য বাড্ডাতেও ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই না মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, মিরপুর-১ কাঁচাবাজারসহ অধিকাংশ বাজারেই নেই সিটি করপোরেশনের মূল্য তালিকা।

মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে বাজার করেন তৌফিকুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই বাজারে রোজা শুরুর আগেই ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। আজও একই দাম। সিটি করপোরেশনের কোনো মূল্য তালিকা তো চোখে পড়েনি।

মাংস ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নয়। তাই যে যার খুশি মতো মাংস বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সিটি করপোরেশন দাম বেধে দিলে কী হবে? আমাদের নিজেদের বসার কথা ছিল, সেই সুযোগটুকু পাইনি। কাজেই, কে কীভাবে বিক্রি করছে আমরা বলতে পারব না। আমাদের বসার ঠিকানা ছিল গাবতলীতে। সেখানে ইজারাদাররা আমাদের ঢুকতে না দেওয়ায় মাংসের দাম নিয়ে কিছু করার নেই।

এ বছর রমজান মাস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

গত রোজায় দেশি গরুর মাংসের কেজি ছিল ৪৫০ টাকা, বিদেশি গরুর কেজি ছিল ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ছিল ৪২০ টাকা, খাসির মাংস ছিল ৭২০ টাকা, ভেড়ার মাংস ছিল ৬৫০ টাকা।

প্রতি বছর রোজা আসার আগেই গরুর মাংস চড়া দামে বিক্রি হয়। পরে সেই দামের হার ধরে মেয়র দাম নির্ধারণ করে থাকেন। কাজেই দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস আগে থেকেই কৌশল চালতে শুরু করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর