রমজানে দাবদাহে রাজশাহী জনজীবনে নাভিশ্বাস

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-22 16:50:44

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলে গত সপ্তাহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ছিল। ফলে জনজীবনে কিছুটা প্রশান্তি বিরাজ করেছিল। তবে গত তিনদিনে এ অঞ্চলে ফের দাবদাহ শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

শহরের রাস্তায় বের হলে অনুভব করা যাচ্ছে, প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি ভাব। পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে এমন দাবদাহে রোজাদারদের কষ্ট বেড়েই চলছে। রাজশাহী অঞ্চলের নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলাতেও একই অবস্থা বিরাজমান।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তীব্রতা বেড়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রখর রোদ। আর বিকেলে ভ্যাপসা গরম। বিকেল ৩টার  দিকে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

পদ্মার ধু ধু বালুচর থেকে ধেয়ে আসা গরম বাতাস শরীরে বিঁধছে আগুনের ফুলকির মতো। যা পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের অতিষ্ঠ করে তুলছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত না হলে আরও সপ্তাহ খানেক এমন তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে।

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পর ৫ মে থেকে তাপমাত্রা ফের বাড়তে থাকে। সোমবার রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। পরদিন ৭ মে ৩৮.৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। আর বুধবার তাপমাত্রা ৩৮.৪ ডিগ্রি ছিল।

প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে রাজশাহীর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রেজিস্ট্রার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫৩ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে ৯০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে, রমজানে এমন দাবদাহে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। নগরীর কাজীহাটা এলাকায় দেখা যায়, ভবন নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকরা। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে চারজন রোজা রেখে কাজ করছেন। এদেরই একজন পবা উপজেলার রাকিবুল ইসলাম। গায়ে টি-শার্ট এবং পরনের ট্রাউজার ভিজে পানি ঝরছে তার। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন তিনি। তবুও কাজ করতে হবে তাকে।

আরেক শ্রমিক রাকিবুল বলেন, ‘রমজান মাসে রোজা রেখে রাজমিস্ত্রির (নির্মাণ শ্রমিক) কাজ করা খুব কষ্টের। তার ওপর যে গরম। রোজা রেখেছি বলে কাজ না করে বসে থাকলে তো চলবে না। রোজায় খরচ বেশি। সামনে ঈদ আসছে। কাজ না করলে সংসার চলবে কীভাবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী’র সভাপতি জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চল কম বেশি উষ্ণ হয়ে উঠছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে আমরাই দায়ী। আমরা নির্বিচারে গাছ উজাড় করে বহুতল ভবন গড়ছি। পদ্মা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতের জন্য ড্রেজিং করা দরকার, তা করা হয় না। ফলে নদী শুকিয়ে ধু ধু বালুচর হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরিবেশ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম এ অঞ্চলে টিকে থাকতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।’

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুর রহমান খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ বেশি হওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। রমজানে সুস্থ থাকতে হলে রোজাদারদের ভাজা-পোড়া জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারে বাড়িতে বানানো লেবুর শরবত ও ফল খেতে হবে। তেলযুক্ত খাবার খাওয়া একদমই ঠিক হবে না। সেহরিতে শাক-সবজি বেশি খেতে হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর