আদিবাসী ও দলিতদের উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী ও দলিত নেতৃবৃন্দ।
তা না হলে অন্তত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনেই আদিবাসী ও দলিত বিষয়ক আলাদা সেল গঠন এবং তাদের সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (০৯ মে) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সরকারি সেবাসমূহে অন্তর্ভূক্তি’ বিষয়ক এক অ্যাডভোকেসি সভায় এসব দাবি জানান আদিবাসী ও দলিত নেতারা। সম্প্রতি টিআইবি’র উদ্যোগে পরিচালিত ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী: অধিকার ও সেবায় অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণার প্রেক্ষিতে এই অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করা হয়।
অ্যাডভোকেসি সভায় টিআইবি’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য আগে দেওয়া ১৩ দফা সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়ে আদিবাসী, দলিত ও চা শ্রমিক প্রতিনিধিরা আরো কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-সরকারি কর্ম কমিশনের প্রশিক্ষণ নীতিমালায় আদিবাসী ও দলিতদের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, আদিবাসী ও দলিতদের জন্য পৃথক ব্যাংক ঋণ নীতিমালা করা, রাষ্ট্রীয় গেজেট তালিকায় বাদ পড়া বিভিন্ন আদিবাসী ও দলিত গোষ্ঠীকে তফসিলভুক্ত করা, আদিবাসী ও দলিতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণ ও সম্পদ দখলের মামলাসমূহ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনা, সংসদে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য বন্ধ করা, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে আদিবাসী ও দলিতদের অন্তর্ভুক্ত করা, সমতলের আদিবাসী ও দলিতদের জন্য অর্থসহায়তা আরো বাড়ান, চা শ্রমিকদের লিখিত স্বীকৃতি দেওয়াসহ তাদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
সভায় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদিবাসী ও দলিতদের বিষয়ে এক ধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি করা। আন্দোলনের ধারা পরিবর্তন হওয়ায় এখন তথ্যনির্ভর আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে সেসব তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের বিশ্বাস, রাষ্ট্র আদিবাসী ও দলিতদের সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।
জাতীয় আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। এ ধরনের গবেষণা আমাদের অ্যাডভোকেসি ও আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহীর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীরা নানা ধরনের বিপদের মধ্যে আছে। তাই আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য দরকার।
সভায় টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া, অভিযানের নির্বাহী পরিচালক বনানী বিশ্বাসসহ দেশের বিভিন্ন আদিবাসী, দলিত ও চা শ্রমিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।