রমজানে সরকারের পক্ষ থেকে বেধে দেওয়া দামের পরিবর্তে মনগড়া মূল্য তালিকায় বাড়তি দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মাংসের দোকানে বাজারে ৭০০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত দামটি মহিষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আবার কেউবা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দাম তুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য সত্য নয় বলে জানানো হয়েছে। আর ক্রেতারা এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছেন।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের অভিজাত কাজীর দেউড়ি ও রিয়াজ উদ্দিন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
রমজানের শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক বৈঠকে বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চাওয়া হয়। সে হিসেবে দ্রব্যমূল্যের দাম নির্ধারণ এবং বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে নির্ধারিত দামে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৫৩০ টাকা রাখা হয়।
এ তালিকার বাইরে গিয়ে বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করায় মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) অক্সিজেন এলাকায় তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। রমজানের তৃতীয় দিনের মাথায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন দামের মূল্য তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দামের পাশাপাশি গরুর মাংসের দাম হাড়সহ ৫২০ থেকে ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে তালিকায় মহিষের দাম উল্লেখ নেই।
কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এ দামের বাইরে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন নুরুল হক নামের এক ব্যবসায়ী। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি করছেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, ওই দামতো এখন নাই, স্যাররা দাম তুলে দিছে। এর পাশে আরেক বিক্রেতা নতুন মূল্য তালিকা দেখিয়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন বলে জানান।
অপরদিকে নগরীর অন্যতম বৃহত্তম রিয়াজ উদ্দিন কাঁচাবাজারেও একই দাম লক্ষ্য করা যায়। সেখানে ব্যবসায়ীরা নিজস্ব মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে দেদারসে গুরুর মাংস বিক্রি করছেন। মো. আহসানউল্লাহ নামে ক্রেতা কেজিতে ৭০০ টাকা দরে দেড় কেজি গরুর মাংস কিনেছেন এক হাজার টাকায়। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, এক টাকাও কম রাখা হয়নি। বরাবর ৭০০ টাকা দাম নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাজার মনিটরিংয়ের পরেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছে না। তারা কোনোভাবেই মূল্য তালিকা মানছেন না। আমরাও নিরুপায় হয়ে বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।
রিয়াজ উদ্দিনের গরু মাংস ব্যবসায়ী মেজাম্মেল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমরা বেধে দেওয়া দামে মাংস বিক্রি করছি। যে দামের কথা বলা হচ্ছে সেটা মহিষের জন্য প্রযোজ্য, গুরুর জন্য না।'
নতুন মূল্য তালিকা দেখা হলেও তিনি বলেন, 'আমরা পড়ালেখা জানি না। দোকানে তালিকা দেওয়া আছে ওই দামে বিক্রি করছি।'
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল উদ্দীন মূল্য তালিকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নন বলে জানান। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকেই গরু, মহিষ, খাসিসহ অন্যান্য দাম নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল টিম নিয়ে বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করছে। যাতে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করা হয়। এরপরেও কেউ বাড়তি দামে গরুর মাংস বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বেধে দেওয়া দামে মহিষের দাম উল্লেখ না থাকার বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিয়ে জানাবেন বলেও জানান।