বসিলা জঙ্গি আস্তানা: পরিচয় নাও মিলতে পারে নিহত জঙ্গিদের!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 01:04:05

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দুই জঙ্গির নাম সুজন ও সুমন, তাদের বয়স আনুমানিক ২৫-৩০ বছর হবে বলে জানিয়েছিল র‍্যাব।

তবে ঘটনার দুই দিন পর র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই জঙ্গি যে পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিল, সেটা সঠিক ছিল না। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়, তাদের পরিচয় গোপন করার জন্য।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বসিলার জঙ্গি আস্তানার অভিযানের পর পরই দুই জঙ্গির পরিচয় শনাক্তকরণে তদন্তে নামে পুলিশ ও র‍্যাব। কিন্তু অভিযানের ১১ দিন পার হয়ে গেলেও দুই জঙ্গির নাম পরিচয় কিছুই শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী র‍্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তা।

বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় ভবনের চারপাশে ঘেরাও করে রাখে র‍্যাবের সদস্যরা, ছবি: সুমন শেখ

 

র‍্যাব ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত সূত্রে জানা যায়, জঙ্গি আস্তানাটিতে অভিযানকালে বাড়ির একটি কক্ষে থাকা দুই জঙ্গি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী দেয়। পরে র‍্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ভেতরে ঢুকে দুজনের ছিন্নভিন্ন মরদেহ খুঁজে পায়।

আরও জানা যায়, যেহেতু মরদেহ ছিন্নভিন্ন, সেক্ষেত্রে জঙ্গিদের আঙুল খুঁজে পাওয়াও যায়নি। যার ফলে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে র‍্যাবের ক্রিমিনাল ডাটাবেজে বা নাগরিক পরিচয় কোনটায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে নিহত দুই জঙ্গি, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য বলে জানা গেলেও তারা পুরান সদস্য নাকি নব্য সেটিও পরিষ্কার হতে পারেনি তদন্তকারীরা। ঘটনার পরের দিন এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করা হয়।

অভিযানের সময় আস্তানা এলাকায় বেশ কয়েকবার আগুন ধরে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, ছবি: সুমন শেখ

 

বৃহস্পতিবার (৯ মে) বসিলার জঙ্গি আস্তানার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার ১১ দিন পার হয়ে গেলেও দুই জঙ্গির পরিচয় শনাক্তকরণে কোনো অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে তদন্ত সেই আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তবে জঙ্গিদের পরিচয় শনাক্তকরণের অগ্রগতি বলতে যতটুকু তারা বলছেন, 'ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে'।

এ বিষয়ে র‍্যাব-২ এর এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বসিলার জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযানে যে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারা জেএমবির সদস্য। তবে তাদের সঠিক নাম বা পরিচয় এখনো জানা যায়নি। দুই জঙ্গির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের পরিচয় শনাক্তকরণের বিষয়ে কিছুটা এগোনো যাবে।'

জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে র‍্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ছবি: সুমন শেখ

 

এর আগে র‍্যাব-২ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যেহেতু বিস্ফোরণে দুই জঙ্গির আঙুল খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই এখন ভরসা ডিএনএ টেস্ট। তাই এখন জঙ্গিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে গেলে, ডিএনএ পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডিএনএ নমুনা হাতে না এলে, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

তবে তারা বলছেন, শুধুমাত্র ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দিয়েই নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না। কারণ ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য মরদেহের দাবিদারের (পরিবারের সদস্য) প্রয়োজন। কিন্তু নিহত দুই জঙ্গির মরদেহের কোনো দাবিদার বা পরিবারের লোকজন এখনো পাওয়া যায়নি। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনায় ডিএনএ নমুনা ক্রস চেক করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।

আরও জানা গেছে, ডিএনএ টেস্ট ও নিখোঁজ জিডির মাধ্যমে নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় শনাক্ত না করা গেলে, তাদের পরিচয় নাও মিলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিজি বিশ্বাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'নিহত দুই জঙ্গির ডিএনএ নমুনাসহ সকল খুঁটিনাটি বিষয় আমরা সংগ্রহ করে রেখেছি। এখন যদি কোনো দাবিদার এসে মরদেহের দাবি করে তাহলে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। নয়তো সারা দেশের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ জিডি থেকে কোনো ক্লু পেলে, তদন্ত করে হয়তো বিষয়টি সুরাহা করা যাবে। এছাড়া আর কোনো উপায় এই মুহূর্তে নেই। তবে এতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপাতত ডিএনএর ওপরই আমরা ভরসা রাখছি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর