ক্রয় ক্ষমতার বাইরে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-27 18:04:36

গ্রীষ্মের রসালো ফল হিসেবে তরমুজ বেশ জনপ্রিয়। ইতোমধ্যে খুলনার বাজারে ব্যাপকহারে তরমুজের চালান আসলেও দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় গরমের এ রসালো ফলের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। একদিকে রমজান শুরু হয়েছে, অপরদিকে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে চারপাশ। গরমের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বৃদ্ধি করছে।

শুক্রবার (১০ মে) খুলনার স্টেশন রোড ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে ট্রলারযোগে পাশ্ববর্তী লঞ্চঘাটে তরমুজের চালান আসছে। স্টেশন রোডের পাইকারদের মোকামে এসব তরমুজ গুদামজাত করা হয়। প্রায় প্রতিটি মোকামেই গরমের রসালো ফল তরমুজে ছেয়ে গেছে।

স্টেশন রোডের পাইকারদের এসব মোকাম থেকেই খুলনার খুচরা বাজারে তরমুজ ছড়িয়ে পড়ে। পাইকার ও খুচরা বাজারে প্রচুর তরমুজ আমদানি হলেও গ্রীষ্মের রসালো এ ফলের দাম আকাশচুম্বী। প্রতিদিনই তরমুজের চালান বাড়ছে, কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণই নেই। বরং গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুলনায় বাড়ছে তরমুজের দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০টাকা দরে।

স্টেশন রোডের পাইকারি তরমুজ ব্যবসায়ীরা বার্তা২৪.কমকে জানান, এ বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চাষিদের তরমুজ চাষে খরচ বেশি হয়েছে। অপরদিকে, খরচের তুলনায় তরমুজের ফলন আশানুরুপ হয়নি। এ কারণে চাষিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে তরমুজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরা কিছু ক্ষেত্রে চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করায় দাম কমছে না।

স্টেশন রোডের সাথী বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী মোল্লা শাকের হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খুলনার বাজারে দাকোপের বাজুয়া, ব‌টিয়াঘাটা, চর‌বেশন, ভোলা, আমতলীসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরমুজ আসে। এ অঞ্চলে জাপানি তরমুজ, থাই তরমুজ, বাঙালি তরমুজ ও চায়না তরমুজের চাহিদা বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর তরমুজের ফলন একেবারেই ভালো হয়নি। যে কারণে তরমুজ কিনে আনতে হচ্ছে বেশি দামে। আমদানি খরচ, মোকাম খরচ আর শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার পর তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। প্রতি ১০০ তরমুজ ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হয়।’

তরমুজের অতিরিক্ত দাম নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে তরমুজ কিনতে হয়। তারপর খুচরা বাজারে সামান্য লাভ করতে গেলেই অনেক দাম হয়ে যায়।

নগরীর তারেক পুকুরের খুচরা তরমুজ বিক্রেতা রুহুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্টেশন রোড থেকে বেশি দাম দিয়া তরমুজ কিনছি। তারপর ভর্তুকি তো আছেই। এক সপ্তাহ তরমুজ রাখলে ওজন কমে। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তা না হলে আমরা খাব কি!’

অপরদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করেন, পবিত্র রমজান ও গরমের সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বৃদ্ধি করেছে।

চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে অভিযোগ করে বলেন, ‘সব দেশে রোজায় সবকিছুর দাম কমে, আমাদের দেশে উল্টা বাড়ে। রোজার দু'দিন আগেও ৫০টাকা কেজি দরে তরমুজ কিনেছি। এখন ৬০টাকায় কেজি কিনতে হচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্তদের অবস্থা জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ-এমন। এ বছর তরমুজের যে দাম, গত বছর এর অর্ধেক দামও ছিল না। লাভ করতে করতে আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।’

উল্লেখ্য, তরমুজ সাইট্রুলিন নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে যে লাইকোপেন থাকে তা টিউমারের বৃদ্ধি হ্রাস করে, প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও বিটা ক্যারোটিন হৃদযন্ত্রের শক্তি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিহত করে। তাছাড়া গরমের রসালো ফল হিসেবেও তরমুজের আছে সুখ্যাতি। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে তরমুজ কিনতে পারছেন না নিন্ম আয়ের মানুষরা। মৌসুম শেষে গ্রীষ্মের রসালো এ ফলের দাম কমার আশায় আছেন অনেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর