মা, আস্থা-ভালোবাসা-নির্ভরতা-নিশ্চয়তা

ঢাকা, জাতীয়

কামরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:08:44

মা। পৃথিবীর সকল নারী-পুরুষের কাছে এক আস্থা, ভালোবাসা, নির্ভরতা আর নিশ্চয়তার জায়গা। মানুষ যখন সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত থাকে তখন মনের অজান্তে যে শব্দটি মুখ থেকে বেরিয়ে আসে সেটি, হচ্ছে- মা। সন্তানের কিসে ভালো হয়, আর কিসে খারাপ হয়, তা মায়ের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। কারণ, মানব শিশু পৃথিবীর আলো-বাতাসের উপযোগী হওয়ার জন্য যা দরকার, সেগুলো মায়ের গর্ভেই হয়ে থাকে। তখন একমাত্র এই মায়ের সাথেই থাকে সেই মানবশিশুর সম্পর্ক।

একটি মানবসন্তানের বেড়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মায়ের। জীবকূলের মধ্যে সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় জন্ম নেয় মানবশিশু। কিন্তু মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্পে সেই মানবশিশু হয়ে উঠে সকলের প্রিয় পাত্র, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। মায়ের মুখ থেকেই প্রথম সেই শেখে প্রথম বুলি। তাই তো বলা হয় মাতৃভাষা।

সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন একটি নাড়ির সাহায্যে মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে পুষ্টি পৌঁছায়। সন্তান জন্মের পর সেই নাড়ি কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু এই একটি নাড়ি কেটে দেওয়া হলেও মায়ের সাথে সন্তানের নাড়ির বন্ধন থাকে আজীবন। এবার শত শত অদৃশ্য নাড়ি কাজ করে। কোনো কিছুতেই সন্তানের সাথে মায়ের সেই অদৃশ্য নাড়ির বন্ধন ছিন্ন করা যায় না, থেকে যায় আজীবন।

যেখানে মানুষের অস্তিত্ব আছে, সেখানে এই মা শব্দটি সার্বজনীন। অন্য সব সামাজিক-মানবিক সম্পর্কে কোনো না কোনো শর্ত প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে থেকে যায়। কিন্তু মা তার সন্তানকে ভালবাসেন, এতে কোনো প্রকার শর্ত থাকে না। নীরবে, নিভৃতে শত কষ্ট সহ্য করেও মা তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখে, ভালবাসে। মা তার সন্তানকে ভালবাসার বিনিময়ে কিছু চান না, সারাজীবন ভালবেসে যান। মায়ের মনে সন্তানের জন্য যে মমতা জন্ম নেয়, তা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

মা দিবসের ইতিহাস:
কথিত আছে, মা দিবসের সূচনা হয় প্রাচীন গ্রিসে। প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিনী তার উদ্দেশ্য উদযাপন করা হতো। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে। তারা দিনটিকে উত্সর্গ করেছিলেন ‘জুনো’র প্রতি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হতো ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে। ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগের রোববার এটি পালন করেন তারা।

মা দিবস নিয়ে আরেকটি ইতিহাস হলো- সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকাজুড়ে মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হয়। ঐ সময়ের পর আমেরিকার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মা দিবসটি সর্বজনীন করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক আমেরিকান।

১৮৭২ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার নিজের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে জুলিয়া ওয়ার্ড নিজে ‘মা দিবস’ পালন করেন। ১৯১৪ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর পৃথিবীর দেশে দেশে মা দিবস পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।

ইসলামে মায়ের মর্যাদা:
মাকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা স্বীয় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালামের পরে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। সমাসীন করেছেন অভাবনীয় মর্যাদার আসনে। বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।

বুখারী শরীফের হাদিসে আছে, নবী হযরত মোহাম্মদ (স) এর নিকট এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?‘ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ এভাবে সাহাবী নবীজী (স:) এর কাছে আরও দুই বার জিজ্ঞেস করলেন। দুই বারই উত্তর পেলেন, ‘তোমার মায়ের।’ চতুর্থ বারের উত্তরে মোহাম্মদ (স:) উত্তর দেন বললেন, ‘তোমার বাবার।’

মাকে নিয়ে মণীষীদের উক্তি:
মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।’

নেপলিয়নের সেই সার্বজনীন কথাটি খুব প্রসিদ্ধ- ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। মাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো দিন নাই। মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। তারপরও বিশ্বের সকল মানুষ যাতে এক সাথে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর