ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মাথাব্যথা ‘রাইড শেয়ারিং’

ঢাকা, জাতীয়

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-21 20:42:06

রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো। ট্রাফিক পুলিশের দাবি, সড়কে এখন এত মোটরসাইকেল যে, সিগন্যাল দিলেও তাদের আটকে রাখা দায়। পারলে তারা আমাদের গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়।

ট্রাফিক সিগন্যাল না মানাই রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের চালকদের কাছে নিয়ম হয়ে উঠছে। তারা আগে যেতে প্রতিযোগিতা করে। সম্প্রতি রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

 

সম্প্রতি রাজধানীর পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, বাংলামটর, ফার্মগেট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সিগন্যালে মোটরসাইকেলগুলো ট্রাফিক আইন মানছেন না। সিগন্যাল দেওয়া হলেও আগে যাওয়ার জন্য আইনের তোয়াক্কা না করে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেকে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট ব্যবহার করছেন। তবে এখনো তারা ট্রাফিক সিগন্যাল মানার প্রতি বেশ উদাসীন।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে অ্যাপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রাইড শেয়ার করে পাঠাও, সহজ, উবার, ওভাই সলিউশন, পিকমি ও হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল। তাদের সব মিলিয়ে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা এক লাখ ৪ হাজার ৩৮৯টি।

রমনা জোনের সহকারী ট্রাফিক উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. গোলাম মোস্তফা সড়কে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকায় গাড়ির অনুপাতে রাস্তা কম। তার ওপর পথচারীরা আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা ট্রাফিক আইন মানতে চান না। নিয়ম না মেনে চললে কোনো কিছুতেই শৃঙ্খলা থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো আমাদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সার্ভিসের চালকরা সিগন্যাল মানতে চান না। সিগন্যাল দিলেও তারা আমাদের গায়ের ওপর দিয়ে চলে যেতে চায়। সড়কে দীর্ঘ যানজটের প্রধান কারণ এই রাইড শেয়ারিং। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আমাদের জনবলও কম।’

উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে (রমনা জোনে) চারটা সিগন্যাল আছে, লোকও চারজন। প্রত্যেকের পক্ষে টানা আট-নয় ঘণ্টা ডিউটি করা সম্ভব নয়। অল্প সময় হলেও তাদের বিশ্রাম দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি কিছু সময়ের জন্য চলে যান তাহলে তার পরিবর্তে আরেকজন লোক প্রয়োজন, কিন্তু সেটা আমাদের নেই। অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল কম থাকে।’

মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন মিরপুর থেকে ধানমণ্ডিতে যান একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. নেয়ামত উল্লাহ তাসনিম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এমনিতেই গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, তার মধ্যে রমজান মাস। যদিও অফিসের সময় একটু পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও যানজট ও গরমে আসা-যাওয়া করতে বেশ কষ্ট হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং সেবা বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। পর্যাপ্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট না থাকায় এসব সেবাগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে। যারা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছে তারা কাজটি সঠিকভাবে করতে পারছেন না। আবার যাত্রী ও মোটরসাইকেল চালকরা তো নিয়মই মানতে চান না। ফলে সড়কে সর্বত্রই অনিয়ম বিরাজ করছে।’

মো. মহিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি মূলত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি অফিসে যাওয়া-আসার সময় পাঠাও’তে রাইড শেয়ার করেন। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘আমি তেমন কোনো তাড়াহুড়া করি না। কিন্তু যারা রাইড শেয়ারকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারা অনেক ক্ষেত্রে সিগন্যাল মানেন না। কারণ তাদের একটি ট্রিপ শেষ করে অন্যটি ধরার তাড়া থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকে জীবনের ঝুঁকিও নিয়ে মোটরসাইকেল চালান, যা করা উচিৎ নয়।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর