রাজশাহী সিটির বর্জ্যে মরছে সড়কের পুরনো গাছ

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী, | 2023-08-26 18:37:37

রাজশাহী মহানগরীর সিটি বাইপাস মহাসড়ক। ছয় মাস আগেও সড়কের দু’পাশে ছিল সবুজের সমারোহ। রাস্তার দু’ধারে বড় বড় মেহগনি ও কড়ই গাছগুলো ছায়া দিত পথচারীদের। আর কৃষ্ণচূড়ার ফুলের বাহার দেখে বিমোহিত হতো রাস্তায় চলাচলরত মানুষ।

গাছগুলোর দিকে তাকালেই চোখ জুড়াতো বিভিন্ন প্রকারের পাখির উড়াউড়ির দৃশ্য। তাদের কিচিরমিচির ডাকে ক্লান্ত পথিকও ফিরে পেতেন সতেজতা। গোটা এলাকা ছিল পাখির অভয়ারণ্য। অথচ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) খাম-খেয়ালিপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে সড়কটি।

নগরীর ময়লা-আবর্জনা ভ্যানে করে নিয়ে ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশের গাছগুলোর গোঁড়ায়। মহাসড়কটির কিছুদূরে অবস্থিত ‘সিটি গরুর’ হাট। সেখানে জবাই করা পশুর বর্জ্যও ফেলা হয় এখানে। স্তুপকৃত বর্জ্যে মাঝে-মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় রাসিকের ‘ক্লিনার’রা। ফলে আগুনের তাপ ও ধোঁয়ায় মরতে শুরু করেছে গাছগুলো। 

সরেজমিন দেখা যায়, আধা কিলোমিটার সড়কে এরই মধ্যে বড় বড় ১৮ থেকে ২০টি গাছ পুরোপুরি মরে গেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আরও অসংখ্য গাছ। গাছগুলোর বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর। ফলে তীব্র গরমে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষেরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

শুকিয়ে যাওয়া গাছ, ছবি: বার্তা২৪

এছাড়া পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ক্ষতিকর বর্জ্যের ধূলি-ছাই ব্যাপকভাবে দূষিত করছে পরিবেশ। পাশের বিস্তৃর্ণ ফসলি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। ক্ষতিকর ধূলি-ছাই ছড়িয়ে পড়ে ক্ষেতের ফসল মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আর বাসস্থান হারাচ্ছে পাখি। একসময়ের অভয়ারণ্য এখন পরিণত হচ্ছে পাখিশূন্য এলাকায়।

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, ‘চলতি বছর রাজশাহীতে যেভাবে দাবদাহ শুরু হয়েছে, এভাবে বড় বড় গাছ নষ্ট করলে তা আরও বাড়বে। দ্রুতই বরেন্দ্র অঞ্চল মরুময়তা ও খরাপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হবে। খোদ সিটি করপোরেশন যদি এ ব্যাপারে এতোটা অসচেতন হয়, তবে মানুষের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে।’

গাছের গোড়ায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, ছবি: বার্তা২৪.কম

১৭ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা সাহেব আলী বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন ভ্যানে করে প্রতিদিন সকালে এখানে ময়লা ফেলে যান। ময়লার যখন অনেক উঁচু স্তূপ হয়ে যায়, তখন ফেলার জায়গা না পেয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়ে সেগুলো ছাই হয়ে গেলে ফের তার ওপরে আবার ময়লা ফেলা হয়।’

সাইকেল আরোহী রঞ্জন দেবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘গাছগুলো ২২ থেকে ২৫ বছর আগে লাগানো। আমাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে। রাস্তায় বের হলে গরমের দিনে ছায়া দিতো। শান্তিতে চলাচল করা যেত। কিন্তু এখন খুব বাজে অবস্থা। এই আধা কিলোমিটার রাস্তা পার হতে গিয়ে অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে।’

গাছের গোড়ায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, ছবি: বার্তা২৪

রাজশাহী বার্ডস ক্লাবের সংগঠক শোভন আছাদুজ্জামান বলেন, ‘বাইপাস সড়কের গাছগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসবাস। কেউ যদি ওই সড়কে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাহলে দেখতে পাবে, কত প্রকারের পাখি ওখানে থাকে। অথচ ময়লা ফেলে গাছ মেরে ফেলে পাখিদের বাসস্থান ধ্বংস করা হচ্ছে। যা পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে। এ নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সরব হয়েছি, তবে কর্তৃপক্ষ ভ্রুক্ষেপ করেনি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহীর সভাপতি জামাত খান বলেন, ‘আমরা জোর গলায় রাজশাহীকে ক্লিন সিটি-গ্রিন সিটি বলে থাকি। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে এ নিয়ে বক্তৃতা দেন। অথচ মাঠের চিত্র ভিন্ন। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, সিটি বাইপাসের দু’পাশের যে গাছগুলো মারা গেছে, তা ২৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী গাছ। এতো দিন ধরে যে গাছগুলো বড় করা হলো, তার গোড়ায় বর্জ্য ফেলে মেরে ফেলা হলো। কতটা অব্যবস্থাপনা হলে এটা হতে পারে! দ্রুত মরা গাছগুলোর স্থানে নতুন করে গাছ লাগানো এবং ওই সড়কে ময়লা না ফেলার জন্য সিটি মেয়রের কাছে দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্যানেল মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ওখানে ময়লা ফেলা শুরু হয়েছিল। নতুন মেয়র হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও আমরা দায়িত্বগ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আনার চেষ্টা করছি।’

ছবি: বার্তা২৪

তিনি বলেন, ‘আমরা বর্জ্য শোধনের মাধ্যমে ডিজেল উৎপাদনের জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী কাজ দ্রুত কাজ শুরু হলে, নগরীতে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া যেখানে গাছগুলো মারা গেছে, ওখানে নতুন করে বৃক্ষরোপণ করা হবে।’

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত হবে ডিজেল

এ সম্পর্কিত আরও খবর