চার বছর পূর্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হচ্ছেন মেয়র খোকন

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 17:25:42

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পূর্ণ করলেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এই চার বছরে কি কাজ করতে করেছেন আর আগামী কয়েক মাসে কি করতে চান এসব বিষয়ে তুলে ধরতে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হচ্ছেন ডিএসসিসি মেয়র।

শুক্রবার (১৭ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে চার বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মেয়র যেসকল বিষয় তুলে ধরতে পারে তা দেওয়া হলো।

মেয়র খোকন তার আলোচনায় বলতে পারেন বলে জানা গেছে, শূন্য তহবিল, খানাখন্দে ভরা বেহাল রাস্তাঘাট, আর্বজনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া এবং নষ্ট/অকেজো সড়কবাতির কারণে অন্ধকারে ডুবে থাকা এ নগরীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত এ নগরী বিগত ৪ বছরে আমাদের নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নগরবাসী ও আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় আজ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বদলে যাওয়া এক নগরী। নগরীতে উন্নয়নের ছোঁয়া এখন দৃশ্যমান। নব প্রতিষ্ঠিত ১৮টি ওয়ার্ডকে নিয়ে পরিকল্পিত মডেল শহর গড়ে তোলার পরিকল্পণা গ্রহণ করা হয়েছে।

মেয়র তার উন্নয়নের চিত্রগুলো তুলে ধরবেন, অসহায় বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ, কর্পোরেশনের নিজস্ব ব্যয়ে বিনামূল্যে  লাশ দাফন এবং শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য আধুনিক কর্মী নিবাস তৈরি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ই-রেভিনিউ ও ট্রেড লাইসেন্স চালু, বিনামূল্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য রোগের ঔষধসহ পরামর্শ সেবা বাড়িতে পৌঁছে দেয়া, অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করে দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল বিলবোর্ড ও এলইডি বক্স স্থাপন, আধুনিক পুলিশ বক্স নির্মাণ, যানজট নিরসণে  আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ট্রাফিক সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন, গার্ড রেইল, বাস স্টপেজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং, অনস্ট্রিট পার্কিং, চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুকরণ, কমিউনিটি সেন্টার ও মার্কেট নির্মাণ, ফুটপাত হকারমুক্ত করা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

চার বছরের কাজের বর্ণনা তুলে ধরবেন মেয়র। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আধুনিক প্রযুক্তির ৪১ হাজার ১৩৩টি এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। ফলে নাগরিকরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছেন। এছাড়া নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ চলমান।

এই চার বছরে সরকার ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ৬৬৯ দশমিক ৯১ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৩১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার নর্দমা ১৩৩ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা, ৫০০ কিলোমিটার নর্দমা এবং ১০০ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।

পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ: পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য দয়াগঞ্জে আধুনিক পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলিতে ছয়তলাবিশিষ্ট ৬টি নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ৬টির কাজ চলমান রয়েছে।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ৪৯৭ কিলোমিটার উন্মক্ত নর্দমা এবং ৫৩৭ কিলোমিটার পাইপ ড্রেনের আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। জেট এন্ড সাকার মেশিনের মাধ্যমে ড্রেনে জমাটবদ্ধ হয়ে থাকা আর্বজনা অপসারণ করা হচ্ছে। ফলে শান্তিনগর, নাজিমউদ্দিন রোড, গণকটুলী এবং বংশাল এলাকায় প্রায় চার যুগের  জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসণ হয়েছে।

নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরবেন মেয়র।

এসময় উল্লেখ করা হতে পারে ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া এলাকার ১৬৭ দশকি ৮৮ কিলোমিটার রাস্তা, ৮ দশমিক ৮১ কিলোমিটার ফুটপাথ ও ১৭১ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ সমাপ্ত হবে।

এছাড়া ৫১৫ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের জন্য ৮১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা, ৬১ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার নর্দমা, ৭ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার ফুটপাথ, ১২টি আরসিসি ব্রিজ, ৩৮৩ মি. এপ্রোচ রোড নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।

খেলার মাঠ-পার্ক উন্নয়ন: “জলসবুজে ঢাকা” প্রকল্পের মাধ্যমে পার্ক এবং খেলার মাঠগুলো বিশ্বমানে উন্নীত করার কাজ চলছে। বেশীর ভাগ খেলার মাঠ ও পার্কের উন্নয়ন কাজ শেষ। উদ্বোধনের অপেক্ষাধীন রয়েছে। ১৯টি পার্কের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল খালেক সরদার পার্কের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক এবং গুলিস্থান পার্কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১২টি খেলার মাঠের মধ্যে শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রসুলবাগ মাঠ এবং জোড়পুকুর খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজও প্রায় সমাপ্ত। অন্যান্য খেলার মাঠ ও পার্কগুলোর উন্নয়ন কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে যা চলতি বছরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে।

বাসরুট রেশনালাইজেশন: নগর পরিবহনগুলো ৬টি কোম্পানির আওতায় এনে ২২টি রুটে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-আজিমপুর, এয়ারপোর্ট-মতিঝিলসহ কয়েকটি রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। চালকদের দক্ষ করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চালক, পথচারীদের সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে আইন মোতাবেক সড়কে চলার বিষয়ে শিক্ষার্থীসহ নাগরিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে।

যাত্রী ছাউনি নির্মাণ: নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২৮টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়েছে। আরও ২টির নির্মাণ কাজ চলছে। এসব যাত্রী ছাউনিতে ওয়াই-ফাই সুবিধা এবং টিকেট বিক্রয় কাউন্টার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কল্যাণ কর্মসূচি: জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫০০ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত ফ্ল্যাট-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে দাফনের জন্য স্থান নির্দিষ্টকরণ, তাঁদের ও তাঁদের সন্তানদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার অর্ধেক ভাড়ায় ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর